28 C
আবহাওয়া
১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ষড়যন্ত্রকারীদের কেমন শাস্তি দিতে বলে ইসলাম

ষড়যন্ত্রকারীদের কেমন শাস্তি দিতে বলে ইসলাম

JUSTICE

ধর্ম ডেস্ক: দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কাজ ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।’ (সুরা আনফাল: ২৭)

শুধু রাষ্ট্রবিরোধী কাজই নিষিদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের সমর্থন করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করেন এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবেন না।…যারা নিজেদের প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ করবেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা: ১০৫ ও ১০৭)

যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বেশি গুরুতর। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জেনে রাখো, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে। মুসলিম রাষ্ট্রনায়কের বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে ভীষণ কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই। তার এই পতাকা তার নিতম্বের কাছে স্থাপন করা হবে। (সুনানে তিরমিজি: ২১৯১)

ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা জরুরি
যখন কেউ রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হয়, তাকে প্রতিহত করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (স.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করলে হাতেব ইবনে আবি বালতা (রা.) ব্যক্তিগত অপারগতার কারণে যুদ্ধের প্রস্তুতির খবর জানিয়ে কুরাইশদের চিঠি লেখেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে চিঠির বাহক নারীকে গ্রেফতার করতে আলী ও জুবায়ের (রা.)-কে পাঠান এবং তারা সে নারীকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা-৩৩২)

রাষ্ট্রবিরোধী কাজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিহত করা আবশ্যক। কেননা ষড়যন্ত্র দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে। যেমন ইহুদি ষড়যন্ত্র মুসলমানদের আরবের সম্মিলিত আক্রমণের মুখোমুখি করেছিল। সেদিকে ইঙ্গিত করে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের ওপর দিক থেকে এবং নিচের দিক থেকে, তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং ভয়ে তোমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে, তখন মুমিনরা পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।’ (সুরা আহজাব: ১০-১১)

রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শাস্তি
ইসলামী শরিয়তে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ও ষড়যন্ত্র শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এমন কাজ করবে তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে বনু কুরাইজা ও বনু মুস্তালিককে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন। তবে কোরআন ও সুন্নাহতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো শাস্তির বর্ণনা আসেনি। তাই শরিয়ত বিষয়টি শাসক ও বিচারব্যবস্থার ওপর ন্যস্ত করেছে। অপরাধের মাত্রা, অপরাধীর অংশগ্রহণ, দেশ ও জাতির ক্ষতি ইত্যাদি বিবেচনা করে তারা শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করবে। শর্ত হলো- অপরাধীদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকাজ পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

ষড়যন্ত্র টের পেলে করণীয়
কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ সম্পর্কে জানতে পারে, তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা জানানো আবশ্যক; যেন ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে না পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন শান্তি বা শঙ্কার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে, তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসুল বা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে, তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা নিসা: ৮৩)

ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক নয়
যারা বন্ধুত্বের অঙ্গীকার ভেঙে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়, তাদের সঙ্গে অঙ্গীকার ও বন্ধুত্ব রক্ষা করা আবশ্যক নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আপনি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা করেন, তাহলে আপনার চুক্তিও আপনি যথাযথভাবে বাতিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আনফাল: ৫৮)

অপারগের জন্য ক্ষমা
কেউ যদি নিতান্ত অপারগ হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করে ফেলে, তবে সে ক্ষমার যোগ্য। যেমন রাসুলুল্লাহ (স.) হাতেব ইবনে আবি বালতা (রা.)-এর অপারগতা গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা-৩৩৩)

দেশবিরোধী তৎপরতা বন্ধে করণীয়
প্রাজ্ঞ আলেমরা দেশবিরোধী তৎপরতা প্রতিহত করতে নিম্নোক্ত কাজগুলো করার পরামর্শ দেন :

১. ঈমানি শিক্ষার বিস্তার: কেননা ঈমান মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে।

২. জাতীয় ঐক্য: কেননা জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।

৩. সচেতনতা বৃদ্ধি: কেননা দেশবিরোধীরা যাতে সরলমনাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে।

৪. দেশপ্রেম জাগ্রত করা: কেননা ইসলাম মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে।

৫. শত্রু-মিত্রের পরিচয় প্রকাশ করা: যেন মানুষ শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পায়।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে দেশবিরোধী কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। দেশবিরোধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ