16 C
আবহাওয়া
৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কলকাতায় যাচ্ছেন এমপি আনারের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা!

কলকাতায় যাচ্ছেন এমপি আনারের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা!

কলকাতায় যাচ্ছেন এমপি আনারের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা!

বিএনএ, ঢাকা: অবশেষে কলকাতায় খুনের শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের উদ্ধার হওয়া মাংস এবং হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতা যাচ্ছে তার পরিবারের ৩ সদস্য। এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।

আদালতের অনুমোদন পাওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মারফত কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহের জন্য আনোয়ারুল আজীম আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ও পুত্র এনামুল হককে কলকাতায় যেতে সিআইডির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে সংসদ সদস্য আনার কন্যা ডরিনের সঙ্গে কলকতার পুলিশ টেলিফোনে এবং তাকে চিঠি দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা দিতে কলকতা ডেকেছিলেন। এবার আদালতের অনুমতি নিয়েই ডাকলেন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম হত্যায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদেশে গেলে সেই নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। সেকারণে ডিবি সদস্যরা ঢাকা থেকে বিমানে তাদের কলকাতায় নিয়ে যাবে।

পরিকল্পিত খুনের শিকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের ছেলে মেয়েরা কলকাতায় গেলে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। কিছু ফরেনসিক পরীক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য এমপি আনারের স্ত্রীকে আসতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে কিছু জানতে চাওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের নমুনার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মাংস এবং হাড়ের ডিএনএ মিলে গেলে এমপি আনার খুনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজীম আনারের কলকাতায় হত্যার ঘটনার পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা নিজেরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না। বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে তারা জানিয়েছেনও। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কয়েকজন তাদের সঙ্গে কলকাতায় যাবেন। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলেই আনারের পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে সিআইডির তদন্ত প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে কলকাতায় রওনা হবে।

জানা গেছে, ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কলকাতায় ইতিমধ্যে জিহাদ হাওলাদার এবং শিহাব ধরা পড়েছে। বাংলাদেশেও একাধিক জন ধরা পড়েছে। চক্রান্তের জাল অনেক দূর ছড়ানো। ভয় দেখানোর জন্য আনোয়ারুল আজীম আনারের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গত ১৩ মে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কলকাতায় খুন হন। খুনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। কিন্তু তার মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

সারাদেশে তোলপাড় করা এই হত্যাকান্ডে জড়িত বেশিরভাগ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে আনোয়ারুল আজীম আনারের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। কারণ, তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে এখনও কোনো পক্ষ জানায়নি। শুধু গণমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করে কোনো আসন শূন্য ঘোষণা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা।

গত ৫ জুন দ্বাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন শেষ হয় ৩ জুলাই। প্রায় এক মাসের এই অধিবেশনে ঝিনাইদহ-৪ কালীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ করে ১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান এবং কলকাতার বন্ধু গোপালের বাসায় ওঠেন। পরের দিন যুক্তরাষ্ট্রে পাসপোর্টধারি বাংলাদেশি বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনের নিউটাউনস্থ সন্জীবা গার্ডেনের বাসায় যান। সেখানই তিনি হত্যার শিকার হন। প্রথমে চেতনানাশক ক্লোরর্ফম দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে পরে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। অতপর ছবি তুলে কিলিং স্কোয়ার্ড লিডার শিমুল ভুঁইয়া বাংলাদেশে অবস্থানরত শাহীনের কাছে পাঠায়। শাহীন সেই ছবি পাঠায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর কাছে। চেয়ারে বসা লাশের ছবির সঙ্গে শাহীন লিখেন ‘আনার শেষ, নমিনেশন কনফার্ম’।

পরবর্তীতে শিমুল ভূঁইয়া বাংলাদেশে ফিরে একই ছবি মিন্টুর ক্যাডার হিসাবে পরিচিত ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবুর মোবাইলে পাঠায়। তারা ফরিদপুরে ভাঙ্গা হাইওয়ে এলাকায় বৈঠক করে। ওই বৈঠকে শিমুল ভূঁইয়া চুক্তির বাকী ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রদানের জন্য চাপ দেয়। ২৩ মে সাইদুল করিম মিন্টু থেকে টাকা এনে দেওয়ার কথা শিমুল ভূঁইয়াকে জানিয়েছিল কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবু। তাদের মধ্যে, খুনের পর আনোয়ারুল আজিমের তোলা ছবিও বিনিময় হয়।

এদিকে কিলিং মিশনে সরাসরি নেতৃত্বদানকারি শিমুল ভূইয়া এবং শাহীনের কথিত বান্ধবী শিলাস্তি রহমান কলকাতা থেকে ফেরার পর ১৯ মে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন। শিমুল ভূইয়ার স্বীকারোক্তির পর ৯ জুন গ্রেপ্তার হন ঝিনাইদ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ। তার দুইদিন পর ১১ জুন ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। এর আগে গত ২৫ মে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ সংসদ সদস্যের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর বাড়িতে যান। সেখানে আনার কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে স্বান্ত্বনা দিতে গিয়ে সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, আমি এতিমের সঙ্গে আছি।

মিন্টু ও গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর আনার খুনের সঙ্গে রাজনৈতিক মোটিভ সামনে আসে। কাজী কামাল প্রকাশ গ্যাস বাবু মিন্টুকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেও সাইদুল করিম মিন্টু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই রহস্যজনকভাবে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতে মিন্টু দাবি করেন তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার অপরাধ তিনি ঝিনাইদহ- ৪ সংসদীয় আসন (কালীগঞ্জ) থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আনোয়ারুল আজীম আনারের উদ্ধার হওয়া মাংস এবং হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষায় পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি খুনের শিকার হয়েছেন। সেই সঙ্গে তার প্রতিনিধিত্বকারি আসন ঝিনাইদহ- ৪ কালীগঞ্জ শূন্য ঘোষণা করবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ