বিএনএ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসার পিয়ন নোয়াখালীর চাটখিলের জাহাঙ্গীর আলম ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় শীর্ষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। তার হলফনামার বাহিরে থাকা সম্পদের অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। যদিও দলীয় চাপে এবং ৬ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে অব্যাহতি দেওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে যান চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর।
গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলে। পরবর্তীতে তা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে জানায় এবং এই সংস্থাটিও তদন্তে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ ই মে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত বা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। কাকতালীয়ভাবে ওই দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এমন উদাহারণ দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীরের সম্পদের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বিষয়টি সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার সময় জাহাঙ্গীর আলম দেশেই ছিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ করে দেন। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে রাতে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। ১৫ জুলাই সোমবার বিকালে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
মীর হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছে, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। রবিবার রাতে তার কাছেই চলে গেছে জাহাঙ্গীর।’
মীর হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনও জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল। এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তবে এখনও তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তার ব্যক্তিগত সব মোবাইল নম্বর বন্ধ আছে। এজন্য যোগাযোগ করতে পারছি না।’
এর আগে রোববার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পারার পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধা সদনে পিয়ন হিসাবে কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে করোনাকালীন সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন হিসাবে কাজ করেন।
জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বিরোধী একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী/হাসনা