বিএনএ, ডেস্ক : ইসরায়েলে হামলার দুই দিন আগেই সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোকে হামলার কথা জানিয়েছিলেন ইরানের কর্মকর্তারা। যাতে হামলার সময় এসব দেশ তাদের আকাশসীমা রক্ষা করতে পারে। কিন্তু সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সে তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছিল। ফলে ইসরায়েল সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি ইরানের হামলা প্রতিহত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে। ইরান ইসরায়েলে যে ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যাশা করেছিল দৃশ্যত সে পরিমাণ ক্ষতি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদপত্র হারেৎজ।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, ইরানের অর্ধেক ক্ষেপণাস্ত্র হয় উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়েছে অথবা লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগে আকাশ থেকে নিচে পড়েছে। মিসর ও সৌদি আরবের সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গোপনে ইসরায়েলে ইরানের হামলার বিষয়ে তথ্য সরবরাহে রাজি হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভিলেনের ভূমিকা পালন করেছে দেশ দুটি।
হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল জর্ডান। শুধু তা-ই নয়, ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে জর্ডান নিজেদের যুদ্ধবিমান দিয়েও সহযোগিতা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্তত নয়টি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির দুটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তবে তাতে উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
প্রসঙ্গত, পহেলা এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়। ওই হামলার জন্য সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান। এর জবাবে গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান।
ইসরায়েল বলেছে, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রবাহিনী প্রায় সব অস্ত্রই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ভূপাতিত করেছে।
লেবানন সীমান্তে বিস্ফোরণে ইসরায়েলের চার সেনা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। এর দায় স্বীকার করে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ওই বোমা পুঁতেছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাতে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান থেকে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনে ঈদুল ফিতরের দিন ইসরায়েলি হামলায় হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ের তিন ছেলে ও তিন নাতি নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলায় আহত তাঁর আরেক নাতি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে আল–জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, নাবলুসে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি নিহত এবং আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৮ জন নিহত এবং ৯৪ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলে হামলা চালানোর এক দিন পর ইরানের বিমানবন্দরগুলোয় স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার শুরু করা হয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড আজ জানিয়েছে, শনিবার ইরান ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মধ্যে ৮০টির বেশি ড্রোন এবং অন্তত ৬টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে তারা।
এদিকে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটিকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নলেনা বায়েরবক ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তাঁরা ইসরায়েলের প্রতি ইরানের সঙ্গে সংঘাত বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা রাশিয়াও উভয় দেশকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, সংঘাত আরও বাড়লে তা ‘কারও স্বার্থের’ জন্য ভালো হবে না। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইসরায়েলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েল সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশের জনগণকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত ইসরায়েলই নেবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে এ কথা বলেন তিনি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বুধবার ইসরায়েলে যাবেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর দেশটিতে এটা হবে তাঁর তৃতীয় সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জর্ডান, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বৃদ্ধির পক্ষে নয় বলে আবারও বলেছেন তিনি।
বিশেষ রাজনৈতিক বিষয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প প্রতিনিধি রবার্ট এ উড বলেছেন, জাতিসংঘে আসন্ন দিনগুলোয় ইরানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি যত দ্রুত সম্ভব মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইসরায়েলকে সহায়তার বিল পাসের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি