27 C
আবহাওয়া
২:৪৩ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ১৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » গুড়িয়ে দেয়া হবে শেখ মুজিবের সমাধিভবন!

গুড়িয়ে দেয়া হবে শেখ মুজিবের সমাধিভবন!

গুড়িয়ে দেয়া হবে শেখ মুজিবের সমাধিভবন!

।। বাবর মুনাফ ।।

এবার গুড়িয়ে দেয়া হবে শেখ মুজিবের সমাধিভবন। কলকতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে এই সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। ‘এবার নিশানা মুজিব-সমাধি, ঝটিতি হানার জন্য তৈরি দল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি বুলডোজ়ার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিশানায় এখন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া।

সেখানে শেখ মুজিবের সমাধিভবনটির একই পরিণতি করলে বাংলাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থী’-দের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে তারা। তাদের অঙ্ক— একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোবল এবং আবার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টাও ধরাশায়ী হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে তার ছাদে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং ইসলামিক স্টেটস-এর পতাকা ওড়ানোর সময়েই স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘এ বার চলো টুঙ্গিপাড়া’। এই কাজে জামায়াতও তাদের শাখা, ইসলামী ছাত্র শিবির আশপাশের জেলার প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের জড়ো করছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে। তৈরি করা হচ্ছে ‘রণকৌশল’। এই কৌশল হবে আচমকা দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুজিবের সমাধিটি সমূলে ধ্বংস করে দেওয়া।

YouTube player

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যার পরে বিদ্রোহী সেনারা হেলিকপ্টারে করে দেহ এনে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছিলেন। পরে শেখ হাসিনা সরকার এই কবরকে ঘিরে মনোরম একটি সমাধিভবন ও কমপ্লেক্স তৈরি করেছে, বাংলাদেশ সফরে আসা রাষ্ট্রপ্রধানেরা যেখানে এসে মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। পাশেই শেখ পরিবারের বাসভবন। কিন্তু টুঙ্গিপাড়ায় মুজিবের এই সমাধিস্থলে আক্রমণ করাটা যে সহজসাধ্য নয়, বিলক্ষণ বোঝে হিযবুত তাহরীর, জামায়াত ও হেফাজতের মতো মৌলবাদীরা।

আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনেও গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় এখনও খুবই শক্তিশালী এই দলের সংগঠন। আগস্টের মাঝামাঝি বিএনপির কিছু নেতা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গাড়ির বহর নিয়ে এলাকায় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েছিলেন। গোপালগঞ্জের মানুষ সেই গাড়িবহর ভেঙেচুরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বেদম মার খেয়েছিলেন বিএনপি যুবনেতারা। প্রাণও হারিয়েছিলেন কয়েকজন। এর পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দিয়ে গোপালগঞ্জে যথেচ্ছ ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা দিয়েও সুবিধা করতে পারেনি মুহাম্মদ ইউনূস সরকার। আওয়ামী লীগের এক নেতার কথায়, “টুঙ্গিপাড়ায় আমাদের ঘরে ঘরে দুর্গ। বঙ্গবন্ধুর সমাধির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে ছাড় পাবে না।”

প্রশাসন খুনের মামলায় নাম জড়িয়ে দেওয়ায়, অন্যত্র গা-ঢাকা দিয়ে থাকা গোপালগঞ্জের এই নেতা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে কিছু মৌলবাদী বিচ্ছিন্নভাবে সমাধিভবনের বাইরে জড়ো হয়ে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রতিরোধে এই দুষ্কৃতীকারীরা পালিয়ে যায়। এর পরে সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আনন্দ বাজার পত্রিকা আরও লিখেছে, গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন, টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাতে রীতিমতো বাহিনী তৈরি করছে মৌলবাদীরা। ভারতের বসিরহাট সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরায় জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের একটি দলকে এ জন্য গোপালগঞ্জের অদূরে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে ফরিদপুরের একটি বাহিনীকেও তৈরি করে রাখা হয়েছে। সেই বাহিনীটি সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি শিবিরে প্রাক্তন সেনাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে।

বিস্ফোরক তৈরি এবং বসানোর পাশাপাশি পিস্তলের মতো ছোট অস্ত্রের ব্যবহার শেখানো হয়েছে তাদের। সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখা হয়েছে। যোগাযোগ রাখা হচ্ছে হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে, যাতে খুব কম সময়ে তারা ট্রাকে চড়িয়ে কয়েকশো মারমুখি লোককে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে আসতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হাসনাত আবদুল্লা এ দিনই ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন— যা তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন গোয়েন্দারা। হাসনাত লিখেছেন, ‘যুদ্ধে আপনি পরাজিত হলে মারা যাবেন, আর যদি আপনি বিজয়ী হন তা হলে আপনাকে পরাজিতদের ধ্বংস করে দিতে হবে।’

প্রথমে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়ি এবং তার পরে বাংলাদেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতামন্ত্রীদের ঘরবাড়ি লুট ও ধ্বংসে হাসনাতের সংগঠনের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে জামায়াতের ইসলামী ছাত্র শিবির এবং বিএনপিপন্থী কয়েকটি সংগঠনের কর্মীদেরও। এর পরে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব বাংলাদেশ জুড়ে লুটপাটের নিন্দা করলেও তাতে অংশ নেওয়া কর্মীদের শাস্তি দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন, “এই ভাঙচুর লুটপাটে, বাংলাদেশ, গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যেতে পারে।”

সরকারের উপদেষ্টা পদে থাকা ছাত্রনেতা মাহফুজ রহমানও ফেসবুক পোস্টে ভাঙচুরকারীদের ‘শেষ সতর্কবার্তা’ দিয়ে জানিয়েছেন, সরকার এবার কঠোর হাতে তাদের দমন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, সবই নেহাত লোক দেখানো। ভাঙচুর থামাতে এঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি, উল্টো গাজীপুরে মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়ি লুটপাটের সময়ে বাধা দেওয়ায় প্রায় দেড়শো লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরের প্রতিরোধে জখম এক ছাত্র এ দিন মারা গিয়েছে। এ জন্য ফের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন হাসনাতরা —বলেছে আনন্দ বাজার পত্রিকা।

বিএনএ নিউজ টুয়েন্টিফোর/ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ