।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।
বিএনএ, চট্টগ্রাম: ৭ কোটি টাকা লোহার স্ক্র্যাপ মাত্র ১ কোটি ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে এসেছে দীর্ঘ ৮ মাস পর।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) অনুসন্ধানে নামে দুদক। সকাল ১০টা থেকে টানা ছয় ঘণ্টা এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের তিন সদস্যের দল। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১’র সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক এর নেতৃত্ব দেন।
এসময় দুদক টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পর সংশ্লিষ্ট শাখার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। কাগজপত্র যাচাইকালে দেখা গেছে, টেন্ডারের কার্যক্রম শেষ হলেও ঠিকাদারকে মালামাল সরবরাহ করা হয়নি। এসব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ টাকায়। কিন্তু এসব স্ক্র্যাপের প্রকৃত মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। সেই হিসেবে হেরফের হয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ নিয়ে বন্দরজুড়ে তোলপাড় চলছে।
বন্দরের ভান্ডার শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসব লোহার স্ক্র্যাপ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ৩১, ৩২, ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর এই পাঁচটি লটে স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ৫৮ নম্বর লটে ৫০ টন স্ক্র্যাপ দেখানো হয়। এ লটে রয়েছে-জাহাজ ও পন্টুনের পুরাতন অকেজো মালামাল। একইভাবে ৬০ নম্বর লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ একই দেখানো হয়। মালামালও একই ধরনের। প্রকৃতপক্ষে এ দুই লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ প্রায় ৭৫০ টন।
কার্যাদেশ পাওয়ার পর মেসার্স আল-আমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক আল আমিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীর কাছে মালামাল বিক্রির চেষ্টা করেন। স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী আলমগীরকে তিনি ৫৮ ও ৬০ নম্বর লটের স্ক্র্যাপগুলো দেখান। প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৬০ হাজার টাকা দরে আলমগীর কিনে নিতে চান। এজন্য আল আমিনকে তিনি কার্যাদেশ দেখাতে বলেন। তবে আল-আমিন দুই লটে মাত্র ১০০ টন স্ক্র্যাপের বৈধ কাগজ দেখান। ফলে পুরো কার্যাদেশ না পেয়ে স্ক্র্যাপ নিতে আলমগীর অস্বীকার করেন। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের সীমা স্টিল মিলের কাছে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় স্ক্র্যাপগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন আল-আমিন। একইভাবে ১৬ জানুয়ারি মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্সকে ৩১, ৩২ ও ৫৯ নম্বর লটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩১ নম্বর লটের মালামালের দাম ২ লাখ ২৭ হাজার ৯০০ টাকা ধরা হয়। ৩২ নম্বর লটের ৭ হাজার ১১৬ কেজি স্ক্র্যাপের দাম ৩৭ হাজার ৭০০ টাকা ধরা হয়। ৫৯ নম্বর লটের স্ক্র্যাপের পরিমাণ ৯৫ টন দেখানো হয়। অথচ এ লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ ৩৫০ টনের বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখার একজন কর্মকর্তা জানান-৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর লটের স্ক্র্যাপের পরিমাণ ১ হাজার ১০০ টনের বেশি। অথচ কাগজপত্রে মাত্র ১৯৫ টন দেখানো হয়েছে। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক স্ক্র্যাপগুলো লুটপাট করেছে।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১’র সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ভান্ডার শাখার ৩১, ৩২, ৫৮, ৫৯, ও ৬০ নম্বর লটে লোহার স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রির কাগজ, রেকর্ডপত্র, স্টক রেজিস্ট্রার, মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার ও স্টক করা মালামাল সরেজমিন পরিদর্শনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানের বিষয়ে যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও মালামালের ওজন পরিমাপ সাপেক্ষে বিস্তারিত প্রতিবেদন অতি শীঘ্রই দুদকের প্রধান কার্যালয় বরাবরে দাখিল করা হবে।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী