।।শামীমা চৌধুরী শাম্মী।।
বিএনএ ডেস্ক : সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশ শাখার শীর্ষ জেনারেলসহ ১৩ জন নিহত হন। এ হামলার জবাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ড্রোনের পাশাপাশি ক্রুজ মিসাইলও নিক্ষেপ করেছে ইরান। প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান-ইসরায়েল দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হলে কে জিতবে?
আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের চেয়ে সামরিক শক্তিতে কিছুটা এগিয়ে ইরান। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।
এছাড়া নিয়মিত সেনাতেও ইসরায়েলের চেয়ে অনেক এগিয়ে ইরান। ইরানের যেখানে নিয়মিত সেনার সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার। সেখানে ইসরায়েলের রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার সেনা। তবে রিজার্ভ সেনা ইসরায়েলের কাছে বেশি। ইরানের রিজার্ভ সেনা আছে ৩ লাখ ৫০ হাজার। আর ইসরায়েলের আছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার।
যুদ্ধের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ট্যাংক। এটি শত্রু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ অস্ত্রে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। ইরানের ট্যাংকের সংখ্যা এক হাজার ৯৯৬টি। আর ইসরায়েলের কাছে আছে এক হাজার ৩৭০টি। সাঁজোয়া যানেও ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। তেহরানের কাছে সাঁজোয়া যান রয়েছে ৬৫ হাজার ৭৬৫টি। আর ইসরায়েলের কাছে আছে ৪৩ হাজার ৪০৩টি।
ইরানের কাছে সামরিক উড়োজাহাজ আছে ৫৫১টি। অপরদিকে ইসরায়েলের কাছে আছে ৬১২টি। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের কাছে ইরানের চেয়ে দ্বিগুণ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৪১টি। ইরানের কাছে রয়েছে ১১৬টি।
পরিবহন উড়োজাহাজ ইসরায়েলের চেয়ে ইরানের কাছে ৭ গুণ বেশি। ইসরায়েলের পরিবহন উড়োজাহাজ রয়েছে ১২টি। সেখানে ইরানের পরিবহন উড়োজাহাজ রয়েছে ৮৬টি। ইরানের চেয়ে হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের সংখ্যা ইসরায়েলের বেশি। ইরানের এমন হেলিকপ্টার আছে ১৩টি। ওইদিকে ইসরায়েলের আছে ৪৮টি। এছাড়া ইরান ও ইসরায়েলের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। তবে এই ক্ষেত্রে ইসরায়েল এগিয়ে।
ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। আয়রন ডোম মূলত ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপ করা একটি স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। মিসাইল বা রকেট প্রতিরোধক এই আয়রন ডোম মূলত তিনটি কাজ করে। রাডারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করা, দ্রুত সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য তৎপর হওয়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে রুখে দেওয়া।
আধুনিক যুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন। এই শক্তির দিক দিয়েও এগিয়ে আছে ইরান। দেশটির কাছে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ১০১টি ও সাবমেরিন রয়েছে ১৯টি। অপরদিকে ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ৬৭টি ও সাবমেরিন আছে ৫টি।
স্টোকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে—ইসরায়েলের হাতে রয়েছে ৯০টি পরমাণু বোমা। তবে, এখনো ইরানের হাতে এ ধরনের অস্ত্র থাকার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যদিও ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের দাবি—এই মারণাস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তেহরান। যদিও ইরানের দাবি—কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র বানানো নয়; তাদের পরমাণু প্রকল্পের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।
ইরান সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও বিশ্বের শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের রয়েছে সুসর্ম্পক। সেই ক্ষেত্রে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ চেইনে ইরানের চেয়ে ইসরায়েল বেশ শক্তিশালী বলা যায়। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক আছে। তবে তারা প্রকাশ্যে ইরানের পক্ষে অবস্থান নিবেন কীনা সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সবমিলিয়ে ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে কে জয়ী হবে তা বলা কঠিন। কেননা, বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ, আরব বিশ্বের ভূমিকা ও যুদ্ধ কৌশলের ওপর নির্ভর করছে সব কিছু।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম/এইচমুন্নী