34 C
আবহাওয়া
১২:৩৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৩

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৩

কারাগারের রোজনামচা

সূর্য বিদায় নিয়েছে, জেলখানায় একটু পূর্বেই বিদায় নেয় । কারণ ১৪ ফিট দেয়াল দাঁড়াইয়া আছে আমাদের চোখের সম্মুখে ।

২৬ সেলের সিকিউরিটি বন্ধুরা আমাকে একটা রজনীগন্ধার তোড়া উপহার পাঠাইয়াছে আমার পড়ার টেবিলের উপর গ্লাসে পানি দিয়ে রাখলাম । সমস্ত ঘরটি রজনীগন্ধার সুমধুর গন্ধে ভরে গিয়েছে। বড় মধুর লাগলো । বিশেষ করে ঐ ত্যাগী বন্ধুদের যারা জীবনের ২৫ থেকে ৩০ বৎসর নীতি ও দেশের জন্য জেল খেটেছেন, আজও খাটছেন । তাঁদের এই উপহার আমার কাছে অনেক মূল্যবান । শুধু মনে মনে বললাম, ‘তোমাদের মতো ত্যাগ যেন আমি করতে পারি তোমরা যে নীতিই মান না কেন, তাতে আমার কিছু আসে যায়

না। তোমরা দেশের মঙ্গল চাও, তাতে আমার সন্দেহ নাই তোমরা জনগণের মুক্তি চাও এ কথাও সত্য । তোমাদের আমি শ্রদ্ধা করি । তোমাদের এই উপহার আমার কাছে অনেক মূল্যবান ।

রাত কেটে গেল । এমনি অনেক রাত কেটে গেছে আমার । প্রায় ছয় বৎসর জেলে কাটিয়েছি । বোধ হয় দুই হাজার রাতের কম হবে না, বেশি হতে পারে । আরও কত রাত কাটবে কে জানে? বোধ হয় আমাদের জীবনের সামনের রাতগুলি সরকার ও আইবি ডিপার্টমেন্টের হাতে।

১৯শে জুন ১৯৬৬ ॥ রবিবার

ঘরটা তো আমাদের এক মাত্র জায়গা যা একটু বাহিরে হাঁটাহাঁটি করতাম তাও বন্ধ । বৃষ্টি চলছে সমানে । বারান্দা দিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু বারান্দাটা ভিজে গিয়েছে । পায়খানায় যাওয়ার উপায় নাই পানি পড়ে সমস্ত শরীরটা ভিজে যাবে ছাতাও নাই । চা প্রস্তুত হয়ে গেছে, খেয়ে নিয়ে ঘরের ভিতরই ঘুরতে আরম্ভ করলাম । প্রায় ৯টায় বৃষ্টি থামলে আমি বের হয়ে পড়লাম । দেখলাম বরিশালের বাবু চিত্তরঞ্জন সুতারও দাঁড়াইয়া আছেন তাঁর সেলের দরজার কাছে । বুঝলাম তাঁর অবস্থাও আমার মতো । আমার ঘরের একটা সামান্য বারান্দা আছে কিন্তু তাঁর সেলে তাও নাই বৃষ্টি থেমেছে, তাই বের হয়ে পড়েছে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে । তাহাকেও আলাদা করে রাখার হুকুম দিয়েছে। বরিশাল জেলে ছিলেন। মাসে অন্ততপক্ষে স্ত্রী ও ছেলের সাথে দেখা হতো । তা আর হবে না কষ্ট দেও, যত পার । আমাদের আপত্তি নাই আমরা নীরবে সবই সহ্য করব ভবিষ্যৎ বংশধরদের আজাদীর জন্য । আমাদের যৌবনের উন্মাদনার দিনগুলি তো কারাগারেই কাটিয়ে দিলাম আধা বয়স পার হয়ে গেছে ।

আর চিন্তা কি? এই নিষ্ঠুর ব্যবহারের বিচার একদিন হবেই । দেখেও যেতে পারি, আর না দেখেও যেতে পারি । তবে বিশ্বাস আছে, হবেই ।

আবার বৃষ্টি। তাড়াতাড়ি পাকের ঘরে উপস্থিত হলাম । ‘দেখি কি পাক করছে?’ বাবুর্চি বলল, ‘পটল ভাজি করছি, পেঁপেও পাক করব মাছ এখনও আসে নাই ।’ কিছু সময় দাঁড়াতে হলো । দেখলাম কিভাবে পাক করবে । পানি পড়ে ঘর দিয়ে আধা ঘর ভিজে গিয়েছে। একটু পরে আমি জমাদার সাহেবকে বললাম খবর দিতে । এভাবে চলতে পারে না ।

সূত্র : কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

আরও পড়ুন :

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব ৭১

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৯

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬১
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ