16 C
আবহাওয়া
১২:০৭ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রমজানের রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

রমজানের রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

রমজানের রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

সাহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত করা জরুরি। রোজা পালনে সাহরি ও ইফতারের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়ার রয়েছে যথেষ্ট গুরুত্ব।
তিরমিজি শরিফে উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসা রা: থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাত থাকতেই রোজার দৃঢ় ইচ্ছা করল না, তার রোজা হয় না। এ হাদিসের মর্মের সাধারণত্ব থেকে অনুমিত হয়, সব ধরণের রোজার জন্য রাত থাকতেই বা সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করা জরুরি।

ফরজ রোজার নিয়ত আরবি ও বাংলা (rojar niyat bangle)

রোজার নিয়ত:
ফরজ রোজার আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

রোজার বাংলায় নিয়ত

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

রমজানে সেহেরি, সাহরির দোয়া মানে রোজার নিয়ত

সেহেরির সময় জাগ্রত হওয়া রোজার প্রতি আগ্রহের প্রকাশ। সেহেরির সময় প্রশান্তির নিদ্রা পরিহার করে শয্যা ত্যাগ করা প্রকৃতই ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি অনুরাগ। এতে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য লাভ হয়। সেহেরির সময় জাগ্রত হওয়া একপ্রকারের মুজাহাদা বা সাধনাও বটে। এ সময় আল্লাহর রহমত নাজিলের সময় এবং ফরিয়াদ ও দোয়া কবুলের সময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে রোজার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। সেহেরি খাওয়া রোজার জন্য শর্ত নয়। তাই সেহেরি না খেলেও রোজা হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন, সেহেরি খাওয়া সুন্নত। অল্প খেলেও সুন্নত পালন হয়ে যাবে।

আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)।’ (মুসলিম, নাসাঈ)

রোযা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। আর এই রোযা রাখার জন্য সেহরি খাওয়ার প্রয়োজন হয়।সে কারণে সেহরির দোয়া বা সেহরির নিয়ত জানার জন্য মুসলমানদের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। যদিও এটি ফরজ নয়।
সেহরি কেউ বলেন সেহেরি আবার কেউ বলেন সাহরী। এটি আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ, ঊষার পূর্বের খাবার। পারিভাষায় সেহরির অর্থ হল, ”মুসলিমদের দ্বারা গৃহীত ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা রমজান মাসে বা অন্য কোন দিন সাওম রোজা পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে গ্রহণ করা হয়।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও। কারণ, সেহরিতে বরকত নিহিত।- সহিহ বুখারী
আল্লাহ তায়ালা সেহরির সময় সম্পর্কে বলেন, “আর রাত্রি বেলা খানা-পিনা কর যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমাদের সম্মুখে রাত্রির বুক হতে প্রভাতের শেষ আভা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। তখন এসব কাজ পরিত্যাগ করে রাত্রি পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ করে নাও। সূরা বাকারা-১৮৫

সেহরির সময় যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক না হয় অর্থাৎ পূর্ব দিগন্তে সাদা বর্ণ না দেখা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেহরি খাওয়া দুরস্ত আছে। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তারপর আর কিছু খাওয়া দাওয়ার সুযোগ নেই। সেহরি খাওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

 

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ

 

রোজার নিয়ত করা ফরজ

রোজার নিয়ত নিয়ে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে রয়েছে নানান ধারণা। রোজার নিয়ত করা লাগবে কি লাগবে না, আরবিতে নিয়ত করা লাগবে নাকি বাংলাতে বললে হবে, মুখে উচ্চারণ করতে হবে নাকি মনে মনে বললে হবে ইত্যাদি। রোজার নিয়ত করা কি ফরজ। এর উত্তর হলো রোজা রাখার পূর্বে রোজার নিয়ত করা ফরজ। কেউ যদি রোজা রাখার জন্য রোজার নিয়ত না করে রোজা পালন করে তাহলে তার রোযা শুদ্ধ বা সঠিক হবে না।
‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’- সহিহ বুখারী
রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামী কালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়।
ফরয রোজার নিয়ত রাত বাকি থাকতেই করা উত্তম। উম্মুল মুমিনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।-সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩

প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। হাদিস শরীফে আছে,

‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’-সহিহ বুখারী ১/২; আরো দেখুন : আলমুহাল্লা ৪/২৮৫
নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত করা গেলেও অন্য সব ধরনের রোজার জন্য রাতেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৩৪৬

রমজানে ইফতার

রোজাদারের জন্য সাহরি খাওয়া ও ইফতার করা সুন্নাত। বিশেষ কিছু না পেলে সামান্য খাদ্য বা কেবল পানি পান করলেও সাহরির সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। ইফতার খুরমা কিংবা খেজুর দ্বারা করা সুন্নাত। তা না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। ইফতার আয়োজনে অপচয় বা লোক দেখানো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।


রমজানে, রোজার ইফতারের দোয়া (iftarer dua) বাংলা

 

আমরা যারা মুসলমান তারা পবিত্র রমজান মাসে ফরজ রোজা রেখে ইফতার করি। এ সময় নিচের ইফতারের দোয়া পাঠ করতে হয়।

ইফতারের দোয়া বাংলা, আরবী উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।

ইফতারের ফজিলত
সারা দিন রোজা রাখার পর রোজাদারের জন্য ইফতারের মুহূর্তটা পরম আনন্দের। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৬)

তারাবির নামাজ

রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভিন্ন ইবাদত করে থাকেন। সংযমের এ মাসে তারাবির নামাজ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এবং সাহাবীদেরও তা আদায়ের জন্য বলেছেন।

তারাবি নামাজের নিয়ত

নামাজে খতম তারাবি পড়া হয়। সুরা তারাবির মাধ্যমে নামাজ আদায় করলেও নামাজ আদায় হবে।

রমজানে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। আর এ নামজকেই ‘তারাবির নামাজ’ বলা হয়।

তারাবি নামাজের নিয়ত
তারাবি নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা উভয়ভাবে নিয়ত করা যাবে।

আসুন জেনে নিই তারাবির নামাজের নিয়ত-

তারাবি নামাজের নিয়ত- نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر. (নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।) অর্থ: আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া– سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح. উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

রমজানের রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া (rojar niyat bangle)

পবিত্র মাহে রমজান মাস শুরুর আগেই এসব দোয়া আমাদের মুখস্থ করে রাখা উচিত। না হলে রমজানে নিজেকে অনেকটা অপরাধী মনে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুক। আমিন।

বিএনএ/ বিএম, এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ