30 C
আবহাওয়া
৩:৩৬ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাজনৈতিক দল হিসাবে আসছে ‘হিযবুত তাহরীর’

রাজনৈতিক দল হিসাবে আসছে ‘হিযবুত তাহরীর’


‘হিযবুত তাহরীর’ আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ মুক্তির দল। ১৯৫৩ সালে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের শরীয়াহ আদালতের বিচারপতি শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী ‘হিযবুত তাহরীর’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্য হতে এই দল ধীরে ধীরে আফ্রিকা, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মওলা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হিযবুত তাহরীরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ২০০০ সালে ঢাকার ধানমন্ডির একটি কোচিং সেন্টারে প্রাথমিক অবস্থায় তিনি স্থানীয় অধ্যায় স্থাপন করেন। পরে ২০০১ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি রাজনৈতিক প্লাটফরম হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত, অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মওলাই বাংলাদেশে ‘হিযবুত তাহরীর’ প্রতিষ্ঠা করেন।

YouTube player

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৮ বছর পর সংগঠনটি প্রকাশ্যে দেখা যায় রাজধানীর পিলখানা হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। ওই সময় হিযবুত তাহরীর একটি প্রচারপত্র বিলি করে। যার শিরোনাম ছিল ‘সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে ধ্বংস করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করুন।’ এই অবস্থায় ২০০৯ সালের ২২ শে অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “জননিরাপত্তার স্বার্থে”–এক প্রেসনোটের মাধ্যমে ‘হিযবুত তাহরীর’কে নিষিদ্ধ করে।

হিযবুত তাহরীর দাবি, ২০০৯ সালে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশের জের ধরে হাসিনা সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তখন সেনাবাহিনীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে হিযবুত তাহরীর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাহসীভাবে রুখে দাঁড়ায়। তাদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করতে ব্যাপকভাবে প্রচারপত্র বিতরণ, আলোচনা সভা, সমাবেশ ও মিছিলসহ ধারাবাহিক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

হিযবুত তাহরীর মনে করে, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে মদিনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে কর্মপদ্ধতিতেই তারা সারা বিশ্বে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়।
হিযবুত তাহরীর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামরিক সহায়তা নুসরাহ খুজঁছে। তারা বিশ্বাস করে, পৃথিবীর কোনও-না-কোনও মুসলিম দেশের সেনা-বাহিনী তাদের নির্শর্ত সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। তাদের নুসরাহ সংগ্রহের তালিকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও রয়েছে, যেটা প্রমাণিত হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের সেনা অভুত্থান প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক। ২০০৯ সালে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাকে বাধ্য করা হয় অবসরে যাওয়ার। তাকে ২০১৬ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ব্লগার ও ধর্মনিরপেক্ষ কর্মী অনন্ত বিজয় দাস হত্যার অভিযোগে সংগঠনটির নেতা শফিউর রহমান ফারাবীকে অভিযুক্ত করা হয়।

’হিযবুত তাহরীর’ ২০১২ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য যারা এই গ্রুপের সাথে সম্পর্ক রেখেছিল। ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মিছিল বের করার পর দলের সদস্যরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালের ১৫ জুন হিযবুত তাহরীর সদস্য গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে মাদারীপুরে এক হিন্দু কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। “পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের” পরে পুলিশ হেফাজতে তিনি মারা যান।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে, হিযবুত তাহরীর ছয় সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই করা আহ্বান জানান। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গিয়াস উদ্দিন আহসানসহ ৭ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীকে ৭ আগস্ট জাতীয় সংসদের সামনে প্রথমবারের মতো বাধাহীনভাবে সমাবেশ করতে দেখা যায়। সাদা কালো কাপড়ে ইসলামের কলেমা লেখা পতাকা, খিলাফতের দাবি সম্বলিত ব্যানার লিফলেট নিয়ে শ’খানে কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল। একই দিনে সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটি সভা করে। এছাড়া সরকার পতনের পর হিযবুত তাহ্‌রীর ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে।

বন্যার সময় ‘ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ’ শিরোনামে হিজবুত তাহরীর ব্যানারে ঢাকায় বড় বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে দলে দলে কারাগারে আটক নেতারা মুক্তি পেতে শুরু করে।এই অবস্থায় হিযবুত তাহরীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৫ সেপ্টেম্বর আবেদন করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংগঠনটির ব্যাপারে যে কঠোরতা ছিল সেটি বর্তমানে অনেকটাই শিথিল বলে অনেকে মনে করছেন। অতীতে কখনোই হিযবুত তাহ্‌রীরকে এতটা সক্রিয় এবং তৎপর বাংলাদেশে দেখা যায়নি বলেও মত অনেকের।

হিযবুত তাহরীর নীতি নির্ধারকরা প্রকাশ্যে বলেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাদের বেশ জোরালো ভূমিকা ছিল। সেকারণে অন্তবর্তীকালীন সরকারও তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল। সংগঠনটির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে নীতি নির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী হিযবুত তাহরীর রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ