বিএনএ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত এক বছরের তুলনায় গত তিন মাসে সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে স্থানিয়দের মাঝে। পূর্বের মতো প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা তেমন একটা নেই বললে চলে। গত কয়দিন আগেও যেখানে প্রতিদিন ধারাবহিক ভাবে মোটরসাইকেল, সিএনজি ও দোকান চুরি, ছিনতার সহ লুটপাট হতো গত তিন মাসে তেমন কোন ঘটনা না ঘটায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিবর্তন বা উন্নয়ন হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। চুরি ছিনতাই না থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্থির নিস্বাস নিতে পেরে শুকরিয়া প্রকাশ করেছেন স্থানিয় দোকান মালিক, খামারি, ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, মিরসরাই থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। গত ৬ মার্চ তিনি বদলি হয়ে মিরসরাই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার দ্বায়িত্ব পান। দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে থানা এলাকায় ওয়ারেন্টভূক্ত দাগী আসামীদের দড়পাকড় শুরু করেন। ৩ মার্চ থেকে গত ১৪ মে পর্যন্ত গত ৩ মাসে তিনি প্রায় ১ শ ৫০ জন আসামী গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠাতে সক্ষম হন।
এছাড়া তিনি, ১৭ হাজার ২শ ৭৫ পিস ইয়াবা, ১শ৬০ লিটার ছোলাই মদ, ৯ লিটার বিদেশী মদ ও ২ কেজি গাজা উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু পূর্বক হাজতে প্রেরণ করেন। দাগী চিহ্নীত সন্ত্রাসী ও আসামীদের দড়পাকড়ের কারনে তাদের পোষ্য অনুসারীরা গাঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। অপরাধীরা গা ঢাকা দেওয়ায় অপরধের মাত্রা কমেছে বলে মত প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের উপকুলিয় এলাকা সাহেরখালী বেড়ি বাঁধের দোকান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, গত তিন মাস আগেও এখানে প্রতিনিয়ত চুরি ও লুটপাট চলতো। কিন্ত এখন এখানে দোকানিরা খুব সুখে শান্তিতে তাদের ব্যবসায় পরিচালনা করছে। কেনাকাটা না থাকলেও শান্তি, চুরির ভয় নেই। চিহ্নীত চোরদের এখন এলাকায় দেখা যায় না।
মিঠানালা পাত্তার পুকুর এলাকার মুদি দোকানি এনায়েত হোসেন আরিফ জানান, বাজার এলাকায় স্থানিয় উঠতি বয়সের কিশোরগ্যাং এর সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অরাজগতা চালাত। ৩ মাস আগেও বাজারের মধ্যে বোমা ফাটিয়ে ভিতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু গত ৩মাস এরা গাঢাকা দিয়েছে।
মিরসরাই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, আমি মিরসরাই থানায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ১শ ৫০জন আসামী গ্রেপ্তার করেছি। তার মধ্যে নিয়মিত মামলার আসামী ৬৫জন, জিআর ৩২জন, সি আর ২২ জন, সাজা প্রাপ্ত জিআর ২জন, সাজা প্রাপ্ত সিআর ২জন ও মাদক মামলায় ১৬জন কে গ্রেপ্তার করি।
এছাড়া প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মিরসরাই থানা পুলিশের ৮টি টহল টিম পুরো থানা সারা রাত নির্ঘুম ডিউটি করে। চিহ্নীত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও পুলিশি সচেতনতার কারনে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রনে আনতে পেরেছি বলে মনে করছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সহযোগীতা পেলে মিরসরাই থানাকে অপরাধ মুক্ত রাখতে পারবো বলে আশা করছি।
মিরসরাই সার্কেল এএসপি লাবিব আব্দুল্লাহ জানান, আমি গত দেড় বছর আপনাদের দুই থানার দ্বায়িত্বে আছি। তবে এটা সত্য যে মাঝখানদিয়ে হঠাৎ করে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রনে চেষ্টা করেছি, মহাসড়কে চালককে জিম্মিকরে গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় কসবা থেকে গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। কক্সবাজার থেকে সিএনজি উদ্ধার করেছি, বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছি।
কাজের প্রয়োজনে মিরসরাই থানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজ করতে অনেক আগ্রহী, সে অনেক পরিশ্রমী, অনেক আসামীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে, মোটরসাইকেল ও সিএনজি চুরি একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। মহাড়কে ডাকাতির ঘটনা ঈদের সময়েও ঘটে নাই এটা বিশাল ব্যাপার। বাকি দুচারটা ব্যাতিক্রম ঘটনা যা ঘটে তাও আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
বিএনএনিউজ২৪.কম/আশরাফ উদ্দিন/এনএএম