বিশ্ব ডেস্ক: ২০২১ সালের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। গত এপ্রিল মাসে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ছিল ৯০ ডলার।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) আন্তর্জাতিক বাজারে ডব্লিউটিআই ক্রুড তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৭.৬৮ ডলার। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দামও কমেছে, তবে তা এখনও ৭০ ডলারের নিচে নামেনি।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীন, যার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় দেশটির তেল আমদানি কমে গেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে প্রভাব পড়েছে এবং তেলের দাম কমে গেছে।
করোনা মহামারির সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ২০ ডলারে নেমে এসেছিল। পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে নেমে আসে এবং তারপর থেকে দাম তার আশপাশেই ছিল। তবে চলতি মাসে দাম আরও কমে গিয়ে ৭০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
আগস্ট মাসে চীন অপরিশোধিত তেলের সর্বোচ্চ মাসিক পরিমাণ আমদানি করেছে, কারণ আন্তর্জাতিক তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কার্গো চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে।
অগাস্টে চীনের অপরিশোধিত তেলের আমদানি ১১.৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন (bpd) এ পৌঁছেছে—এটি আগস্ট ২০২৩ সালের পর সর্বোচ্চ স্তর এবং জুলাই মাসের ৯.৯৭ মিলিয়ন bpd নিম্ন স্তরের থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার।
জুলাই মাসে চীনে অপরিশোধিত তেলের আমদানি দুই বছরে সর্বনিম্ন ছিল। আগস্টে তেলের আমদানি পুনরুদ্ধার হয়েছে, তবে তা এখনও আগস্ট ২০২৩-এর তুলনায় ৭% কম।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক আশঙ্কা করছে যে, ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তেলের চাহিদা আরও কমে যেতে পারে। ওপেকের তথ্যমতে, বর্তমানে দৈনিক চাহিদা ১৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল হলেও তা কমে ১৭ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেলে নেমে আসতে পারে।
ওপেক, যা অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, সৌদি আরব, গ্যাবন ও ইকুয়েটোরিয়াল গিনি—এই ১২টি দেশ নিয়ে গঠিত, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কতটা বাড়বে বা কমবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে। চাহিদা কমলে ওপেক অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস করে। গত এক বছর ধরে তারা তেলের উৎপাদন হ্রাস করে বাজারে দাম বাড়াতে সক্ষম হয়নি, তবে আগামী বছর তেলের উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো অপরিশোধিত তেলের উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তবে তেলের দাম ৭০ ডলারের নিচে নেমে যাওয়ায় উত্তোলন বৃদ্ধির সময়সীমা দুই মাস পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওপেক প্লাস জানায়, তারা প্রয়োজনে উত্তোলন কমানো বা অন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি অক্টোবর মাসের জন্য এশীয় ক্রেতাদের জন্য আরব লাইট অপরিশোধিত তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে, গত শুক্রবার প্রকাশিত নতুন মূল্যতালিকা অনুযায়ী।
মূল্যতালিকা অনুযায়ী, সৌদি অরামকো তার আরব লাইট অপরিশোধিত তেলের দাম ৭০ সেন্ট কমিয়েছে।
সূত্র: অয়েল প্রাইস ডটকম ও রয়টার্স।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন