20 C
আবহাওয়া
১২:১১ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাউজানের অধিকাংশ ইটভাটার নেই পরিবেশের ছাড়পত্র

রাউজানের অধিকাংশ ইটভাটার নেই পরিবেশের ছাড়পত্র

রাউজানের অধিকাংশ ইটভাটার নেই পরিবেশের ছাড়পত্র, ছড়াচ্ছে জটিল রোগ

বিএনএ, রাউজান : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ইটভাটায় নেই কোন পরিবেশ ছাড়পত্র। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নেই কোন স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম কানুন। না দেখার অভিনয় করে এসব অবৈধ ইটভাটার ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন, এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশে নানা আইন আর প্রতিষ্ঠান থাকলেও ইটভাটার দৌরাত্ম্য কমছেনা৷ মালিকরা মানছেন না কোনো নিয়ম কানুন৷ ফলে ইটভাটা এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷

রাউজানের হালদা নদীর অদূরে অবস্থিত আবুরখীল গ্রাম। প্রায় কয়েক হাজার লোকের বসবাস এই গ্রামে। গ্রামের লোকালয়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ইটভাটাটি। এই ইটভাটার ধোঁয়ায় গ্রামের চারপাশের লোকজনের সব সময় এলার্জি, সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের নানান জাতীয় জটিল রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ইটভাটা গ্রামের লোকালয় থেকে সরিয়ে না নিলে অচিরেই পুরো গ্রামটিতে অক্সিজেন সংকট হয়ে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগসহ নানান রোগে ভুগতে হবে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, মাঝে মাঝে উপজেলা থেকে স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা আসে। কিন্তু তাতে কোন প্রতিকার হয়না গ্রামবাসীর।

এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ, আবুরখীল গ্রামের লোকালয়ে গড়ে ওঠা ইটভাটায় প্রতিদিন হাজার হাজার ইট পোড়াঁনো হচ্ছে। ইটের কালো ধোঁয়া গ্রামের চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। এসব ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়৷ অথচ কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ৷ ফসলি জমিতে লোকালয়ে এসব ইটভাটার চিমনির উচ্চতা ৬০ ফুটের বেশি নয়৷ অথচ চিমনি থাকতে হবে ১২০ ফুট৷ স্থানীয় লোকজন জানান, ইটের ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় তারা অতিষ্ঠ৷ এমনকি আশপাশের গাছ মরে যাচ্ছে৷ গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে৷

রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ইটের ভাটার কারণে এই এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্ট ও চোখের রোগে বেশি আক্রান্ত হন৷

চট্টগ্রামে ৪০৮টি ইটভাটার ৩১২টি-ই অবৈধ। বাকি ৯৬টি জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হলেও সেগুলোতে চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব। অপরদিকে পরিবেশ অধিদফতরের হিসেবে চট্টগ্রামে ইটভাটার সংখ্যা ৪০৫টি।

এর মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েছে মাত্র ৫০টি। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘একটি ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই ও স্থানীয় ভূমি অফিসসহ আরও কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন। সবগুলো ছাড়পত্র না পেলে ইটভাটা তৈরির সুযোগ নেই। এরপরও অসাধু কিছু ব্যক্তি নিয়মনীতি না মেনে ইটভাটা তৈরি করছে।

এসব অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে তথ্য পেলে অভিযান চালানো হচ্ছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা আছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এখানে জেলা প্রশাসনের হিসাবে ইটভাটা ১০৯টি এবং পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবে ৯৬টি। তবে রাঙ্গুনিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা বলছেন, এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে ইটভাটা আছে ১৫০টি।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৪০৫টি ইটভাটার মধ্যে ছাড়পত্র আছে ২৬২টিতে। ৩৫৫টি ইটভাটার পরিবেশসংক্রান্ত লাইসেন্স হালনাগাদ করেনি। ১৪৩টি ইটভাটার লাইসেন্সই নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি জিগজ্যাগ চিমনি রয়েছে ১১৯টি ইটভাটার। উন্নতমানের অত্যাধুনিক হাইব্রিড হফম্যান কিলনধারী ভাটা রয়েছে মাত্র একটি ও অটো টানেল কিলন ভাটা রয়েছে দুটি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইটভাটা মাটি, পানি এবং জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে৷ ইটভাটার ধোঁয়ায় যে কার্বন মনোক্সাইড থাকে তা বাতাসকে যেমন দূষিত করে, তেমনি গাছপালা এবং ফসলের ক্ষতি করে৷ ইটভাটার বর্জ্যে যে সালফার থাকে তা নদী বা জলাশয়কে দূষিত করে৷ এর ফলে আশপাশের নদী থেকে মাছসহ সবধরণের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ ইটভাটার আগুনের প্রচণ্ড তাপে ইটভাটা এবং আশপাশের ফসলি জমি নিষ্ফলা হয়ে যায়৷ এমনকি পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ও এখন ইটভাটার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ আর ইট ভাটার কারণে বাতাস দূষিত হওয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়৷

রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবীর সোহাগ বিএনএ নিউজকে জানান, উপজেলায় গড়ে ওঠা অবৈধ অনেক ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১২নং উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখীল গ্রামে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ইটভাটাটি বন্ধ করে দেয়ার পরও কিভাবে আবার তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আবুরখীলের ইটভাটাটি জরিমানা করে বন্ধ করে দেয়ার পরও কিভাবে আবার এটা চালাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এই ইটভাটায় আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিএনএনিউজ/জেবি

Loading


শিরোনাম বিএনএ