বিএনএ ডেস্ক: ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা গেছেন…ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ৮৭ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যুর কথা জানায় চিকিৎসকরা। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ৮৭ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহাদাব আকবর জানান, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর জানাজা ও দাফন
সাজেদা চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ রায়হান জানান, আজ বেলা ১১ টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর তার নিজ এলাকা নগরকান্দায় হবে দ্বিতীয় জানাজা। বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবর স্থানে দাফন করা হবে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ব্যক্তি ও শিক্ষা জীবন
ফরিদপুর-২ আসনের এই সংসদ সদস্য ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলাতে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সম্মাননা
সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন। তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন
১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। সেই সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন।
তিনি ফরিদপুরের কৃষাণপুর ইউনিয়ন (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালতা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দশম সাধারণ নির্বাচনেও তিনি এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন।
সাজেদা চৌধুরী গত নবম, দশম ও একাদশ সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জাতীয় সংসদে গঠিত আটটি সংসদীয় কমিটির মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন সাজেদা চৌধুরী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিপর্যয়ের মুখে পড় আওয়ামী লীগ। সেই সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এর আগে ১৯৬৯ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সাজেদা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিএনএ/এ আর/এইচ এম, হাসনা, বি. রহমান
