31 C
আবহাওয়া
৪:৫০ অপরাহ্ণ - জুলাই ১৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » রাজসাক্ষী চৌধুরী মামুনের দুইকূলই গেল!

রাজসাক্ষী চৌধুরী মামুনের দুইকূলই গেল!


বিএনএ, ঢাকা : ‘কোথাও কেউ নেই’ এই ধারাবাহিকে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করে কালজয়ী হয়ে আছেন আসাদুজ্জামান নূর আর ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দর্শক-হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন আব্দুল কাদের।

‘বদি’ ছিলেন বাকেরের সঙ্গে একই মামলার আসামী। কিন্তু তিনি হয়ে যান রাজস্বাক্ষী। তার স্বাক্ষীর কারণে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়।
প্রায় সাড়ে তিন দশক পর একজন ‘বদি’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। যদিও ২০০৪ সালে খুলনার এরশাদ সিকদারের দেহরক্ষীকে বদির ভূমিকায় দেখা গেছে।
সম্প্রতি কালজয়ী নাটক কোথাও কেউ নেই এর বদির ভূমিকায় দেখা যাবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার অন্যতম আসামি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। গত বৃহস্পতিবার ‘অ্যাপ্রুভার’ হয়েছেন। বাংলায় যাকে বলে ‘রাজসাক্ষী’।

আসুন জেনে নেই রাজসাক্ষী কাকে বলে? আসামি কীভাবে রাজসাক্ষী হন? এ প্রক্রিয়ার শর্তগুলো কী?
ফৌজদারি অপরাধের বিচার হয় ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধিসহ অন্যান্য ফৌজদারি বিধান অনুযায়ী। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৩৩৯ ধারায়, রাজসাক্ষী কে হবেন, রাজসাক্ষীকে ক্ষমা করা ও বিচারপদ্ধতির বিষয় বর্ণনা করা আছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭ ধারার বর্ণনা অনুসারে রাজসাক্ষী বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, কিন্তু ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের সমগ্র ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত সব অপরাধীর সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করে আদালতে সাক্ষ্য দেন।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ১৫ ধারায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বিষয়ে বলা আছে। আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, বিচারের যেকোনো পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন যে ধারা ৩-এ উল্লেখিত কোনো অপরাধে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা অবগত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এমন কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন, তবে সে ব্যক্তি যদি অপরাধ–সম্পর্কিত এবং অপরাধ সংঘটনে প্রধান বা সহায়ক হিসেবে জড়িত অন্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাঁর জ্ঞাত সমস্ত পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ ও সঠিকভাবে প্রকাশ করার শর্তে স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হয়, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দিতে পারেন।
১৫(২) এই ধারার অধীন, ক্ষমার প্রস্তাব গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচার চলাকালে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করা হবে। ১৫(৩) ধারায় বলা হয়েছে রাজস্বাক্ষী হওয়ার ব্যক্তিকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হবে।

রাজসাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে যদি ঘটনার সত্য ও সম্পূর্ণ বিষয় উঠে আসে, তখন ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন বা অন্য কোনো সাজা দিতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। এখন প্রকাশ্য আদালতে তাঁর সাক্ষ্য নেবেন ট্রাইব্যুনাল। তিনিই প্রথম আসামি, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার সংখ্যা হাতে গোনা। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের দেহরক্ষী নূরে আলম রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। এরশাদ সিকদারের সব কুকর্ম আদালতে প্রকাশ করেছিলেন নূরে আলম। তিনি ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ হত্যা মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায়, মামলা থেকে খালাস পান।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন খালাস পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। সব মামলায় তিনি রাজস্বাক্ষী হলেও সব মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারের অন্ধকার কক্ষে কাটাতে হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তার ভূমিকাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনাকারি আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে তুলানা করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিয়ে মুক্তি পেলেও , সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন কীনা—তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বলা যায়, তিনি এখন দুই কুলই হারিয়েছেন!

বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ