বিএনএ,কক্সবাজার: শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলছে আলোচিত কক্সবাজার পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। প্রশাসনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছেন ভোটাররা।
সোমবার (১২ জুন) সকাল আটটায় মোট ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে শুরু হয় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। চলবে বিরতিহীন বিকাল চারটা পর্যন্ত। নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ নিশ্চিতে এরই মধ্যে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ৭৯০ জন পুলিশ, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১২ ওয়ার্ডে ১২টি র্যাবের পেট্রোল টিম, ১২ ওয়ার্ডে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সঙ্গে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন।
জানা যায়, সকাল ৯টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পৌরসভার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটাদের দীর্ঘ লাইন আর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষণীয়।
তবে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা একটু বেশি। নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানকে টপকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত একেএম মোজাম্মেল হকের বড়পুত মাসেদুল হক রাশেদ। নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন আলোচিত ব্যক্তি জগদীশ বড়ুয়া, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা জাহেদুল রহমান ও মাসেদুল হক রাশেদের স্ত্রী জোসনা হকও। এছাড়া ৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৬ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী স্ব স্ব আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় দুই মাস রাতদিন ভোটের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন প্রার্থীরা। তার মধ্যে প্রচারণার মাঠে তুমুল আলোচনায় ছিলেন দুই মেয়র প্রার্থী মাবু ও রাশেদ। এই দুই প্রার্থীই হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে থাকায় এখন পর্যন্ত কাউকে এগিয়ে রাখতে পারছেন না ভোটাররা। তবে একইভাবে দুই প্রার্থীও নিজেদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমি ভূমিদস্যু নই, পেশী শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে জুলুম করিনি। দীর্ঘ ২২বছর কাউন্সিলর হিসেবে রাতদিন জনগণের সেবা করেছি। সাড়ে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে শহরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করেছি। সর্বোপরি নিরাপদ মানুষ হিসেবে ভোটাররা আমাকেই ভোট দেবেন।
নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একেএম মোজাম্মেল হক স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘকাল পৌরবাসীর সেবা করেছেন। তার অবদান এখনো মানুষের মুখে মুখে। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা তার সন্তানরা সব সময় পৌরবাসীর সাথে ছিলাম। আর কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের পরিবারের হিসেবে আমাদের পরিবারকে চিনে মানুষ। সব কিছু বিবেচনা করে ভোটাররা আমাকেই ভোট দেবে।
এ দিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কোনো ধরনের ছাড় নেই। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী পৌরসভাজুড়ে টহল জোরদার করেছে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস.এম শাহাদাত হোসেন জানান, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্য ১১০০ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তাদের নেতৃত্বে দিচ্ছেন ১২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব কেন্দ্রই আইন-শৃঙ্খলবাহিনীর কাছে অতিগুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে ১ ও ২নং ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই কেন্দ্রে অতিরিক্ত নজরদারি রাখবে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
বিএনএ/ ওজি