বিএনএ. ইসলামিক ডেস্ক: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল নামাজ। তিনি নামাজে প্রশান্তি খুঁজে পেতেন। নামাজের মাধ্যমে তিনি জীবনের সব সংকটের সমাধান খুঁজতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নামাজকে আমার চোখের প্রশান্তি করা হয়েছে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৫০)
ফরজ নামাজের পর শেষ রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদ ছিল মহানবী (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তিনি বলেন, ‘রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা মহররমের। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ালে আল্লাহর গভীর ধ্যানে নিমজ্জিত হতেন। এমনকি নিজের শরীরের প্রতিও কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকত না। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রাতে নামাজ আদায় করতেন, এমনকি তার পা ফুলে যেত। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত কষ্ট করেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৭)
তাহাজ্জুদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর তীব্র আকর্ষণ বিবৃত হয়েছে পবিত্র কোরআনেও।
তিনি সারা রাত তাহাজ্জুদে কাটিয়ে দিতেন। তাই আল্লাহ তা’আলা পরম মমতায় বলেছেন, ‘হে চাদরাবৃত! আপনি রাতের সামান্য অংশে জাগরণ করুন। অর্ধরাত বা তার চেয়ে কম অথবা (সামান্য) বেশি। আপনি কোরআন তিলাওয়াত করুন ধীরস্থিরভাবে।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ১-৪)
রমজানে তাহাজ্জুদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। তিনি রমজানে অধিক পরিমাণ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন, বিশেষত রমজানের শেষ দশকে তিনি ইতিকাফ করতেন এবং রাত জাগরণ করতেন। এ সময় তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও রাতে আমলের জন্য ডেকে দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তাঁর পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
সাহাবা কিরাম (রা.) ও তাহাজ্জুদ আদায়ে প্রলুব্ধ ছিলেন। রমজানে তাঁদের এ আগ্রহ আরো বহু গুণ বেড়ে যেত। যেমন আবু হুরায়রা (রা.)-এর ঘরে পালাক্রমে সারা রাত আল্লাহর ইবাদত করা হতো। আল্লাহ তাআলা কোরআনের একাধিক স্থানে সাহাবায়ে কিরামের তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রসংশা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা রাতের খুব সামান্য অংশই ঘুমাত এবং শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৭-১৮)
সাধারণত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ ছেড়ে দিতেন না এবং তিনি ছেড়ে দেওয়া পছন্দও করতেন না। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আবদুল্লাহ! অমুকের মতো হয়ো না। সে তাহাজ্জুদ আদায় করত। অতঃপর তাহাজ্জুদের নামাজ ছেড়ে দিয়েছে।’ (রিয়াদুস সালিহিন)
আসুন! তাহাজ্জুদের নামাজের অভ্যাস করি। সারা বছর যারা তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারি না; অন্তত রমজান মাসে নিজে তাহাজ্জুদ আদায় করি এবং নিজের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে তাহাজ্জুদ আদায়ে অভ্যস্ত করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
বিএনএনিউজ/ বিএম/শাম্মী