16 C
আবহাওয়া
১০:১৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ওয়াসিকার ‘বৃহস্পতি’ তুঙ্গে, ‘শনি’ ভর করেছে জাবেদে!

ওয়াসিকার ‘বৃহস্পতি’ তুঙ্গে, ‘শনি’ ভর করেছে জাবেদে!

ওয়াসিকার ‘বৃহস্পতি’ তুঙ্গে, ‘শনি’ ভর করেছে জাবেদে!

বিএনএ, চট্টগ্রাম: ”চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়, আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়” জাতীয় কবি কাজী নজরুলের গানেই ফুটে উঠেছে ক্ষমতার পালা বদলের রাজনীতি। ক্ষমতা চিরদিন কারোর হাতে কুক্ষিগত থাকে না। সময়ের পরিবর্তনে তা পরিবর্তিত হয়। এ কথাটাই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অনেক সময় মনে রাখেন না, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘটিত সহিংস ঘটনা তারই প্রমাণ। দুই গ্রুপের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ওয়াসিকা সমর্থিত গ্রুপ বেপরোয়া ও মারমুখী। তারা পারষ্পরিক সম্প্রীতির চেয়ে প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। আনোয়ারায় চলমান সহিংসতার মাত্রা দিন দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর উল্টোটা হলেই ওয়াসিকার রাজনীতি ও আনোয়ারার বাসিন্দাদের জন্য মঙ্গলময় হতো। প্রতিশোধ প্রবণতা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না, উল্টো ক্ষতিই করে। সে ক্ষতিটা অনুধাবন করা যায় যখন সময় পরিবর্তন হয়।

YouTube player

বলতে পারেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি শান্ত উপজেলা আনোয়ারায় সর্বশেষ কখন সংঘাত হয়েছিল? এখন থেকে ১৩ বছর আগে ২০১১ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরীর জীবদ্দশায় সর্বশেষ আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘাত হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের ছোটভাই ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম সওগতকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল। সেদিন হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত নাসিরুল হক খান। প্রায় ১৩ বছর পর, আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াশিকা আয়শা খান অর্থ প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। দলে দলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওয়াসিকার ছায়ায় আসতে শুরু করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন তার সমর্থিত প্রার্থী।

ওয়াসিকা আয়শা খানের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। অন্যদিকে সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ওপর শনি ভর করেছে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও বিদেশে তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ছিটকে পড়েছে মন্ত্রী পরিষদের বলয় থেকে। অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। স্থানীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যার ফলে ১১ জন চেয়ারম্যান পক্ষে থাকার পরও উপজেলা নির্বাচনে জাবেদ সমর্থিত প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরী প্রায় ২২ হাজার ভোটে হেরে গেছেন।

এতেই সন্ত্রাসী সমৃদ্ধ ওয়াসিকার গ্রুপ এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, এক সময়ের প্রভাবশালী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী নেতাদের ওপর গত ৭ জুন বিকালে বন্দর সেন্টারে ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীরা হামলা করে। এতে ওয়াসিকা সমর্থিত গ্রুপ কোন ধরনের সংকোচ করেনি। নজিরবিহীন এই হামলাটি যেন ছিল তাদের কাছে উৎসব। এক তরফা এই হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৯ জুন চাতরি টানেল মোড়ে ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্টে প্রধান আসামী মোজ্জামেল হক প্রকাশ গাছ মোজ্জামেলকে গ্রেপ্তার করতে যায় কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা পুলিশ। কিন্তু দুই থানার পুলিশকে মার খেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজ্জামেল হকের নেতৃত্বে ওয়াসিকা অনুসারীরা পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর করে আসামি গাছ মোজাম্মেলকে ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেলসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে তালপাকা গরমে আনোয়ারার রাজনীতির পারদ উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, আখতারুজ্জান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, আনোয়ারুল ইসলাম সওগত বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সংঘাতের সেই রাজনীতিকে ফিরিয়ে এনেছে। ফলে শান্ত উপজেলা খ্যাত আনোয়ারা উপজেলা যেন হয়ে উঠেছে কুরুক্ষেত্র।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ