17 C
আবহাওয়া
১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিইউএফএলে কী মধু?

সিইউএফএলে কী মধু?

চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা

।। এনামুল হক নাবিদ ।।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও কতিপয় শ্রমিকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল)। দেখা যায়, ২০২২ সালের  ২৪শে আগস্ট সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পচিালক (এমডি) দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানে চলা এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে তিনি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এর মধ্যে নানা অনিয়ম, অপরাধ, কারখানায় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তিন দফায় সিইউএফএলের সিবিএ নেতাসহ ১১ শ্রমিককে বিভিন্ন কারখানায় বদলি করা হয়েছে।  কাউকে তোয়াক্কা না করে সিইউএফএল-এ ফিরে আসতে ফের মরিয়া হয়ে উঠছে কতিপয় এসব শ্রমিকরা। এ ছাড়াও বদলিকৃত শ্রমিকরা সিইউএফএলে ফিরে এসে ম্যানেজমেন্টকে দেখে নেবে বলে  হুমকি দেয়ার  অভিযোগও ওঠেছে।

বিসিআইসি সূত্র জানা যায়, গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তিন দফায় বর্তমান সিবিএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ শ্রমিক কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক বদলি করেছিল বিসিআইসির এক দপ্তরাদেশ।

তিন দফার মধ্যে প্রথম দফায় (২৭ অক্টোবর) বিসিআইসির উপ-কর্মচারী প্রধান (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত দপ্তরাদেশে যে সব শ্রমিকের বদলির আদেশ দেয়া হয় তার মধ্যে কারখানার এইচএসও মো. এমরান খানকে বাড়বকুণ্ড চিটাগাং কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজে, এইচএসও-১ মো. আমির হোসেন, এসও-১ সুমন কান্তি দেবনাথ ও এসও ২ মো. তৌহিদুল আলমকে সুনামগঞ্জ ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী লি: এ বদলির আদেশ দেয়া হয়।

এর পর গত বছরের ৩ নভেম্বর  মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত দপ্তরাদেশে আরেক দফায় ৪জনকে বদলি করা হয়। তারা হলেন, এমটি, বিদ্যুৎ/এমটিএস বিভাগের আব্দুল কাদের কে উসমানীয়া গ্লাস সীট ফ্যাক্টরি লিঃ, এইচএসটি, বিদ্যুৎ /এমটিএস বিভাগের মোঃ নাইমুল ইসলামকে কেপিএম লিঃ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, এমটি, বিদ্যুৎ/এমটিএস বিভাগের মোঃ আবু জাহেরকে কেপিএম লিঃ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, এমটি, বিদ্যুৎ/এমটিএস বিভাগের এবিএম আশরাফ হোসেন চৌধুরীকে কেপিএম লিঃ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়।

এর তৃতীয় দফায় আবারো তিন শ্রমিককে বদলি করা হয়। সর্বমোট বিসিআইসির উপ-কর্মচারী প্রধান (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত দপ্তরাদেশে তিন দফায় ১১শ্রমিককে বদলি করা হয়। তবে কি কারণে তাদের বদলি করা হয়েছিল সেটি দপ্তরাদেশে উল্লেখ না থাকলেও বিসিআইসি একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে কারখানায় অনিয়ম দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাদের শাস্তি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে বদলি হওয়া শ্রমিকরা বদলির ৫মাস পার হলেও এখনো ছাড়েনি সিইউএফএলের বাসা। এমনকি কোন কোন শ্রমিক অবৈধ বাসা দখলে নিয়ে ভাড়া তুলে নেওয়ার মত অনুসন্ধানে তথ্য বেরিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সিইউএফএলের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বদলিকৃত শ্রমিকরা তো এখনো বাসা ছাড়েনি। উল্টো  সিইউএফএল-এ ফিরে এসে ম্যানেজমেন্টকে দেখে নেওয়ার মত  হুমকি দিচ্ছে তারা।

কারখানার এসব বিষয়ে কথা বলতে বিসিআইসির লাইন ডাইরেক্টর সাইফুল আলমকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিসিআইসি একটি সূত্রে জানা গেছে বদলি হওয়া শ্রমিকদের বাসা ছাড়তে এস্টেট অফিসারকে নির্দেশ দিলেও বর্তমান (এমডি) ফাইলটি অদৃশ্য কারণে আটকে রেখেছে। যার ফলে বহাল তবিয়তে রয়েছে কতিপয় এই শ্রমিকরা। এছাড়াও বিসিআইসির আইনকে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখিয়ে তারা  রাজনৈতিক শোডাউনের নামে কারখানা অস্থির করে তুলছে।

এ বিষয়ে সিইউএফএলের উপ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) চলতি দায়িত্ব এস্টেট ও গেস্ট হাউজ শাখার প্রধান আমিনুল হক লাভলু বলেন, বদলিকৃত শ্রমিকরা যদি এলপিসি না নেই তাহলে আমাদের করার কিছু নেই। আর তারা যদি এলপিসি না নেয় তাহলে তাদের সুযোগ সুবিধা পাবে না। একজন বদলিকৃত শ্রমিক নেতার পরিচয়ে দুইটি বাসা ভাড়া দিয়ে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। এটি আমি নোট করতেছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা সহযোগিতা করলে আমাদের আরো সহজ হয়।

এদিকে সিইউএফএলের সচেতন কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা মনে করেন, সিইউএফএল একটি বিসিআইসির কেপিআই১ গ্রেডের প্রতিষ্ঠান হলেও বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও শ্রমিকের কারণে সিইউএফএল দুর্নীতিগ্রস্থ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এসব কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা বদলির ফলে কারখানায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। বর্তমানে দেশে এমনিতে সার সংকট রয়েছে। সরকারকে ডলার সংকটের মাঝেও ডলার দিয়ে সার কিনে নিতে হচ্ছে। এসব শ্রমিকরা ফিরে আসলে কারখানা আবার আগের রূপে ফিরে যাবে। এসব বিষয়ে সিইউএফএল কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে।

এসব বদলিকৃত শ্রমিকদের ফিরে আসা ও ম্যানেজমেন্টকে হুমকির বিষয়ে বিসিআইসির চীফ অফ পার্সোনাল জাকির হোসেন বলেন, চাকরি করলে তো ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে তবে বদলিটা তো আর ফিরে আসার জন্য করা হয় নাই। বিসিআইসির রোলস অনুযায়ী তাদের ফিরে আসার সুযোগ নাই।

আর ম্যানেজমেন্টকে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, সিইউএফএল ম্যানেজমেন্ট তো এবিষয়ে আমাদের অভিযোগ করেনি। যদি করে থাকে তাহলে তদন্ত করে দোষী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বিসিআইসি।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সিইউএফএলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিসিআইসির নির্দেশনা ও শ্রম আইন অনুযায়ী সিইউএফএলে ওভারটাইম ভারসাম্য করে তৎকালীন কারখানায় নবনিযুক্ত এমডি শহীদুল্লাহ। এই নিয়ে গত ২০অক্টোবর সিইউএফএলের এমডিকে ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে নিয়ে কারখানায় উত্তেজেনা সৃষ্টি করে সিবিএর এক শীর্ষ নেতাসহ বেশ কিছু শ্রমিক নেতা।

এছাড়াও এসব শ্রমিকের বিরুদ্ধে সিইউএফএলের বাসা বরাদ্দে ঘুষ বাণিজ্যসহ কারখানা মেরামতে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডারের নামে অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে লুটপাট করার অভিযোগ ওঠে। এই অনিয়মের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে রয়েছে এমটিএস বিভাগের প্ল্যান মেন্টেনেন্স প্রধান হিসেবে বর্তমানে কর্মরত সৌমিত্র সাহা (ডি সি ই)। যার সহযোগী হিসেবে রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিত বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জাফরুল্লাহ ব্যাগিং শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল, মেশনারী শাখার আব্দুল লতিফ ও সাইফুল ইসলাম, বদলি হওয়া এস্টেট অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

উল্লেখ্য, বাসা বরাদ্দে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমেটেড (সিইউএফএল) এর এস্টেট অফিসার (এডমিন) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সিইউএফএল থেকে বদলি করা হয়। গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিসিআইসির চিফ অফ পার্সোনেলের পক্ষে ডেপুটি চিফ অফ পার্সোনেল নাজমুন নাহার স্বাক্ষরিত এক দপ্তরাদেশে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দপ্তরাদেশ সূত্রে আরো জানা যায়, বর্তমানে তার কর্মস্থল সিইউএফএল রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম থেকে তাকে বদলি করা হয় কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড ( কেপিএমল) চন্দ্রঘোনা, রাঙ্গামাটিতে। তবে দপ্তরাদেশ কি কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সিইউএফএল একটি সূত্র বলছে, বাসা বরাদ্দের সময় সিবিএ নেতাদের নিয়ে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলকে এই ব্যবস্থা নেয় বিসিআইসি।

সিইউএফএলের ব্যবস্থপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, দেখেন শ্রমিকদের বদলির বিষয়টা বিসিআইসি করে থাকে। এবিষয়ে চুড়ন্ত সিদ্ধান্ত আসে বিসিআইসি থেকে। বাসা ছাড়ার বিষয়ে অনেক শ্রমিক এখানে কাজ করে তবে তার বাসা হচ্ছে ঘোড়াশাল।

বাসা সংকটের মধ্যে বদলি হওয়া শ্রমিকরা কেন বাসা ছাড়ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকরা যদি এলপিসি না নেয় তাহলে তারা কোন সুযোগ সুবিধা পাবে না। এটা তাদের  নিতে হবে। আর কারখানা এরিয়ায় কোন বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নাই।  কোন শ্রমিক এটি করার চেষ্টা করলে সেটি কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিবে।

বদলি হওয়া শ্রমিকদের সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম 

Loading


শিরোনাম বিএনএ