16 C
আবহাওয়া
৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মসজিদের পবিত্রতা যেভাবে রক্ষা করবেন

মসজিদের পবিত্রতা যেভাবে রক্ষা করবেন

মসজিদের পবিত্রতা যেভাবে রক্ষা করবেন

বিএনএ, ডেস্ক: মসজিদ মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর। আর এই ঘর মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং পবিত্র একটি জায়গা। এই ঘর একমাত্র আল্লাহতায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আল্লাহর সামনে নিজেকে সপে দিতে প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে একত্রিত হন মুসলিমরা। মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসজিদ পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সকলের।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত রাখতে চায়, সে যেন আমাকে ভালোবাসে। যে আমার সঙ্গে ভালোবাসা রাখতে চায়, সে যেন আমার সাহাবিদের ভালোবাসে। যে সাহাবিদের সঙ্গে ভালোবাসা রাখতে চায়, সে যেন পবিত্র কুরআনকে ভালোবাসে। যে কুরআনের সঙ্গে ভালোবাসা রাখতে চায়, সে যেন মসজিদকে ভালোবাসে। কেননা মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আদেশ দিয়েছেন এবং এতে বরকত রেখেছেন। মসজিদ আল্লাহর হেফাজতে থাকে, তাই মসজিদের সঙ্গে সম্পর্কিতরাও আল্লাহর হেফাজতে থাকে। তারা নামাজে মনোযোগী হয়, আল্লাহ তাদের কার্যোদ্ধার করেন এবং অভাব দূর করেন। তারা মসজিদে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তাদের জিনিসপত্র হেফাজত করেন।’ (তাফসিরে কুরতুবি : ১২/২৬৬)

রাসুলে করিম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন”। (তিরমিযী – ২৯২)

মসজিদ নির্মাণের প্রকৃত অর্থ হলো মসজিদকে সালাত, জিকির, তাসবিহ ইত্যাদির জন্য আবাদ রাখা। কেননা মসজিদকে কোনো কাফির ব্যক্তি আবাদ করতে পারবেনা এবং মোতোয়াল্লিও হতে পারবেনা।

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় যা করবেন
১। একনিষ্ঠ নিয়তে, বিনয়ী হয়ে, কম্পিত হৃদয়ে মসজিদে প্রবেশ করা। কারণ আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক অবস্থার সাথে অন্তরের পরিশুদ্ধতাও লক্ষ্য করেন। প্রিয় নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “প্রকৃতপক্ষে সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল”। (সহীহ বুখারী- ০১)

২। মসজিদকে সব রকমের অপবিত্রতা ও দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে বিরত রাখা ঈমানের দাবি। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার সামনে আমার উম্মতের ভালো-খারাপ সব আমল পেশ করা হলো। ভালো আমলগুলোর মধ্যে আছে-রাস্তার মধ্যে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া। আর খারাপ আমলের মধ্যে আছে-মসজিদে থুতু, ময়লা-আবর্জনা থাকা সত্ত্বেও পরিষ্কার না করা।’ (বুখারি : ৪১৫; মুসলিম : ৫৫২)

৩। মসজিদে পবিত্রতা রক্ষায় এর ভেতর ক্রয়-বিক্রয় করাও নিষেধ। আল্লাহর ঘরে এসে নিজের জাগতিক প্রয়োজন পূরণ করাটা বিবেকসম্পন্ন কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা এটা খুব অপছন্দ করেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এ ধরনের লোককে কঠিন ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মসজিদে কাউকে কেনাবেচা করতে দেখলে তোমরা বলবে, আল্লাহ তোমার ব্যবসা লাভজনক না করুক।’ (তিরমিজি : ১৩৩৬)

৪। পবিত্র পোশাক দেহ ও মন নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তানেরা! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজ-সজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান করো, তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।’ -(সূরা আরাফ: ৩১)

৫। অজু করে মসজিদে প্রবেশ করা বিশেষত অজুর পানি যাতে মসজিদে না পড়ে খেয়াল রাখা। হজরত উসমান (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অজু করবে আর তা উত্তমরূপে করবে এবং পায়ে হেঁটে ফরজ নামাজ লোকদের সঙ্গে অথবা জামাতের সঙ্গে অথবা মসজিদে আদায় করবে, তার গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ -(সুনানে নাসাঈ: ৮৫৬)

৬। মসজিদে তাড়াহুড়া না করে স্থির ও শান্ত হয়ে বসা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীরস্থিরতা বা শান্তভাব বজায় রাখবে। যেটুকু পাবে তা আদায় করবে আর যা পাবে না তা পূর্ণ করবে। -(সহিহ বোখারি: ৫৯৯)

৭। মসজিদে শোরগোল না করা, মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া, আঙ্গুল না ফোটানো। হযরত হাসান বসরি (রহ.) হতে বর্ণিত, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের জন্য এমন একটি সময় আসবে যখন মসজিদে পার্থিব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, সুতরাং তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না, তাদের সঙ্গে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। -(শোয়াবুল ঈমান: ২৭০১)

৮। ইমামের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনা, সর্বাবস্থায় ইমামের অনুসরণ করা, জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হওয়া কর্তব্য। হযরত রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে ভালো কিছু শিক্ষার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য গমন করল তার জন্য একটি পরিপূর্ণ হজের সাওয়াব রয়েছে। (ইমাম তাবরানি, মুজামুল কবির-৭৪৭৩। আত তারগিব ওয়াত তারহিব-১/১০৪)

৯। আযানের সাথে সাথে মসজিদে প্রবেশ করা এবং প্রথম কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মানুষ যদি জানত আযান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কী ফযিলত রয়েছে, আর তা লটারি ব্যতীত পাওয়া সম্ভব না হত, তা হলে তা পাওয়ার জন্য লটারি করত। আর যদি জানত মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফযিলত তাহলে তার জন্য প্রতিযোগিতা করত। (সহীহ বুখারী-৬১৫)

১০। মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি “বিসমিল্লাহি আসসালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলী জুনুবী ওয়াফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা” বলে প্রবেশ করতেন। আর তিনি যখন বের হতেন তখন তিনি বলতেন, “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুমাগফিরলি জুনুবী ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা”। (ইবনে মাজাহ- ৮১৭)
অপর হাদীসে রয়েছে প্রবেশের সময় “আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” বলা আর বের হওয়ার সময় “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা” বলা। (সহীহ মুসলিম- ৭১৩)

বিএনএনিউজ/বিএম/ হাসনাহেনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ