30 C
আবহাওয়া
২:৫৫ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামের মাদ্রাসার সেই শিক্ষক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের মাদ্রাসার সেই শিক্ষক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের মাদ্রাসার সেই শিক্ষক গ্রেপ্তার

বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমির হিফজ বিভাগের এক শিশু শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরের করেন।

বুধবার (১০মার্চ) সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়।

গ্রেপ্তার শিক্ষককের নাম মাওলানা ইয়াহিয়া। তিনি হাটহাজারী সদরের মারকাযুল ইসলামিক একাডেমি নামের হাফেজি মাদ্রাসার শিক্ষক। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকার মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে ইয়াহিয়া।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে নির্যাতনের অভিযোগে তার বাবা বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেছেন। তাঁরা প্রথমে মামলা করতে রাজি না হলেও পরে বুঝিয়ে রাজি করানো হয়। এই মামলায় মাদ্রাসার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে কাল বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করবে পুলিশ।

সূত্র জানায়, হেফজ বিভাগের শিশুটির জন্মদিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার (৯ মার্চ)। এ উপলক্ষে তাকে দেখতে গতকাল বিকেলে তার মা মাদ্রাসায় আসেন। তার মা চলে যাওয়ার সময় অবুঝ শিশুটি মায়ের পিছু পিছু কিছুটা চলে যায়। এতেই শিক্ষক ইয়াহিয়া রেগে শিশু ইয়াসিন ফরহাদকে নির্দয়ভাবে পেটায়। পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ওইদিন রাত ১টায় মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে শিক্ষক ইয়াহিয়াকে আটক করেন উপজেলা প্রশাসন। পরে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে মাদ্রাসা থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।

মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল রাত ১২টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ওই মাদ্রাসায় যান। একই সঙ্গে শিশুটির মা-বাবাকেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে রাজি তো হনই নি, বরং নির্যাতনের শিকার শিশুর মা-বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন রাতেই, যেখানে অভিযুক্ত শিক্ষকের রুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিতে আবেদন জানানো হয়েছে। ফলে রাত সাড়ে চারটায় ওই শিক্ষকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে শিশুটির মা-বাবার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় প্রশাসন।

শিশুটির বাবা মোহাম্মদ জয়নাল বলেছেন, তার সন্তানকে মারধরের ঘটনায় তিনি ও তার স্ত্রী অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চান না। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে হাফেজী পড়াইতে চাই আমরা, সে তো ওইখানে পড়বে, তাইলে মামলা করে কী হবে? উল্টা শিক্ষকের জীবনটা নষ্ট হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রুহুল আমিন বলেন, একটি হিফজখানায় শিশু নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নজরে আসে। আমি তাৎক্ষণিক হাটহাজারি থানার একটা টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চকলেট নিয়ে যাই। বাচ্চাটির সাথে কথা বলি এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করি।

ইউএনও জানান, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, এমন সময় ছাত্রের বাবা-মা এসে কান্নাকাটি করেন এবং শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান। তারা কিছুতেই মামলা করবেন না এবং আমাদেরকেও আইনগত ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ করেন। তাদেরকে অনেক বুঝানো সত্ত্বেও তারা লিখিতভাবে আমাদের অনুরোধ করেন আইনি ব্যবস্থা না নিতে।

‘রাত ২টা পর্যন্ত অভিভাবকেরা আমার কার্যালয়ে অবস্থান করেন, যেন আমি আইনি ব্যবস্থা না নিই। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক ইয়াহিয়াকে মাদ্রাসা থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বুধবার সকালে শিশুটিকে দেখতে কিছু খেলনা নিয়ে তার বাড়িতে যান ইউএনও রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ৮ বছরের ইয়াসিনের গতকাল জন্মদিন ছিল। আজ সকালে জানার পরে খেলনা উপহার নিয়ে গেলাম বাসায়। আমি ছেলেটার শরীরের ব্যথা নয়, মনের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছি। শরীরের ব্যথা হয়তো নাপা খেলেই সেরে যাবে। কিন্তু ৮ বছর বয়সি শিশু ইয়াসিন দ্রুত ভুলে যাক তার জন্মদিনের এই দুঃসহ স্মৃতি।

অভিযুক্ত মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে ওই মাদ্রাসার হিফয শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া গত তিন মাস ধরে এই আবাসিক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। তিনি আটকের আগে বলেছেন, নির্যাতনের ঘটনায় তিনি শিশুটির মা-বাবার কাছে তিনি মাফ চেয়েছেন।

এমনকি শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে নাস্তা খাওয়ার জন্য মা দুইশো টাকাও দিয়েছিলেন। এরপর মা যখন চলে যাচ্ছেন, সেসময় শিশুটি দৌড়ে মাদ্রাসার বাইরে বেরিয়ে রাঙ্গামাটি-হাটহাজারী চৌরাস্তায় চলে যায়। শিশুটিকে ফিরিয়ে আনতে আনতে ইয়াহিয়া রেগে গিয়েছিলেন।

ইয়াহিয়া বলেন, আসলে যে রকম দেখা যাচ্ছে, অত জোরে মারতে ছিলাম না, বেতটাও হাফ বেত, এক বিঘতের চেয়ে একটু বড় সাইজ। বেশি জোরে লাগে না। কিন্তু আমার অন্যায় হইছে, ওইভাবে মারা উচিত হয় নাই।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ