রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রকাশ আন্ডা রফিক বিতর্কিত সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান প্রকাশ কিলার জিয়াকে এক শত কোটি টাকার বিশাল বাগান বাড়ি ঘুষ দিয়েছেন। আর সেই বাগান বাড়ি জিয়াউল আহসান রেজিস্ট্রি দলিল করেছেন তার ১২ বছরের শিশু কন্যা তাসফিয়া আহসান জইতার নামে। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন বাগানবাড়ির অবস্থান।
দলিলে মাত্র ১২ বছর বয়সী জইতাকে নাবালিকা হিসেবে দেখানো হয়। অর্থাৎ জইতা শিশু থাকা অবস্থায় কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও পিতা জিয়াউল আহসানের বদৌলতে শতকোটি টাকার বাগানবাড়ির মালিক বনে গেছে। আবার সেটি রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নেন জইতার পিতা জিয়াউল আহসান।
গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, এনটিএমসির সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নাবালিকা মেয়ে তাসফিয়া আহসান জইতার নামে একাধিক দলিলে কেনা হয়েছে বাগানবাড়ির পুরো জমি। এর মধ্যে বাগানবাড়ির জন্য প্রথম জমি রেজিস্ট্রি হয় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর। ওই সময় জইতার বয়স ছিল ১২ বছর ৬ মাস ৬ দিন। দলিলে জইতার বাবা ও মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে জিয়াউল আহসান ও নুসরাত জাহান। আর জিয়াউল আহসানের বাবা ও মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও হোসনে আরা বেগম।
১৩৬৮৮ নম্বর দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ০.৬০ একর বা ১.৮১৮ বিঘার দলিল রেজিস্ট্রি হয়। দলিলে যার মূল্য দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। জইতা নাবালক হওয়ায় তার পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন পিতা জিয়াউল আহসান। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কায়েমসাইর মৌজার আরএস ৮৬ দাগের ২.৫১ একর জমি থেকে ০.৬০ একর জমি জইতার নামে কেনা হয়। জমি ক্রয়ের অর্থ নগদ পরিশোধ করেন জিয়াউল আহসান। আর জমি বিক্রয়কারী হিসেবে দেখানো হয়েছে আব্দুর রহীম, রফিকুল ইসলাম, আবদুল বারেক, বেবী আক্তারসহ মোট আটজনকে।
এরপর ২০১৯ সালের ১৩ মে জিয়াউল আহসানের শিশুকন্যা তাসফিয়া আহসান জইতার নামে বর্তমান বাগানবাড়ির ০.৯০ একর বা ২.৭২৭ বিঘা জমির রেজিস্ট্রি হয়, রূপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। যার দলিল নম্বর ৬৩৮৮। দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয় ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ জমিটির আমমোক্তার হিসেবে ছিলেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছেলে কাওসার আহম্মেদ অপু।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুটি তফসিলে কায়েতসাইর মৌজার ২০৯২ খারিজা খতিয়ান ও ২০৯১ জোত থেকে ০.৬০ একর এবং ১৪৯০ খারিজা খতিয়ান ও ১৪৮৯ জোত থেকে ০.৩০ একর জমি কেনা হয়। জমির বিক্রেতা হিসেবে দেখান মো. জাহিদ হোসেন, তানভীর হোসেন, ফারহানা হোসেন ও হাজী হাসমত আলীকে। এখানে মেয়ের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন জিয়াউল আহসান।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাসফিয়া আহসান জইতার নামে বাগানবাড়ির ০.৬৬৭ একর জমি রেজিস্ট্রি হয়, যার দলিল নম্বর ১০৯০। দলিলে মূল্য দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বরুনা মৌজায় ০.২৩৭ একর, নাওড়া মৌজায় ০.১৭ একর ও বসুলিয়া মৌজায় ০.২৬ একর জমি রয়েছে। এই জমিতেও আমমোক্তার ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রফিকের ছেলে কাওসার আহম্মেদ অপু। জমিটি কেনা হয় মো. হোসেন আলী, হাশেম আলীসহ মোট ১৮ জনের কাছ থেকে। যথারীতি এখানেও মেয়ের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন জিয়াউল আহসান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক প্লটে বিশাল আকৃতির বাগানবাড়ি নির্মাণের জন্য ধাপে ধাপে লাগোয়া জমিগুলোও কেনেন রফিকুল ইসলাম। জিয়াউল আহসানকে উপহার দিতেই তিনি জমিগুলোর মালিকদের সঙ্গে দেনদরবার করে বিক্রি করতে বাধ্য করেন। কেউ জমি বিক্রিতে রাজি না হলে জিয়াউল আহসানের নাম ব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করার হুমকি দিয়ে জমি বিক্রিতে বাধ্য করেছেন রফিকুল ইসলাম। শতকোটি টাকা মূল্যের এই বাগানবাড়ির জমি কোনো টাকা না নিয়েই জিয়াউল আহসানের শিশুকন্যার নামে কেনেন রফিকুল ইসলাম।
জিয়াউল আহসানের বাগানবাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এলাকাবাসী সেখানে হামলা চালিয়ে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মালপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাঁর গ্রেপ্তারের পর থেকে বাগানবাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্র ও হকার নিহতের মামলায় ইন্ধনদাতা হিসেবে ৭ আগস্ট রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের আগে জিয়াউল আহসান প্রকাশ কিলার জিয়া ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএনএনিউজ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ মুন্নী