সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডারদের বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছেন।বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন।
আসলে কী বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন? নাকি আড়ালে অন্য কিছু রয়েছে তা নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভূরাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে আড়ালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতিনিচ্ছে ভারত।
কেননা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে অরুণাচল প্রদেশের আনজাও জেলার কাপাপু এলাকায় ক্যাম্পও করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএএল)।
প্রসঙ্গত, ভারতের বহুল আলোচিত অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত লাগোয়া বিশাল অংশের মালিকানা দাবি করে প্রতিবেশি চীন। চীনের সাথে ভারতের মোট ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে কেবল বিরোধপূর্ণ অরুণাচলের সাথে চীনের সীমান্ত রয়েছে এক হাজার ১২৬ কিলোমিটার।
অরুণাচল টোয়েন্টি ফোর এক প্রতিবেদনে বলেছে কাপাপু এলাকায় কাঠে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রঙ ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্য সামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায়, সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ আগে চীনা সৈন্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
ছবিতে দেখা যায়, পাথরের গায়ে ইংরেজিতে ২০২৪ সাল লেখা রয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানা দাবি করার জন্য অনুপ্রবেশের সময় চীনা সেনাবাহিনী এসব কৌশল ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।
নিউজফাই এক প্রতিবেদনে বলছে, দুই দেশকে বিভক্তকারী ম্যাকমোহন লাইনের হাদিগ্রা পাসের কাছের কাপাপুতে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের একটি ক্যাম্পের অবস্থান রয়েছে। আর আনজাও জেলার নিকটতম প্রশাসনিক এলাকা চাগলাগাম ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া চাগলাগাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় গ্লাইতাকরু পাসের অবস্থান।
এর আগে, ২০২২ সালের আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, পিএলএ সৈন্যরা হাদিগ্রা হ্রদের কাছে নিজেদের অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি করছে। সেখানে তিনটি খননকারী মেশিন দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করতে দেখা যায় চীনের সামরিক বাহিনীকে।
একই বছরের ১১ আগস্ট চাগলাগাম থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরের ওই এলাকার নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণ করে চীনের সামরিক বাহিনীর এলআরপি টহল দল। ওই সময় হাদিগ্রা হ্রদের নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে কিছুটা উত্তরে চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ক্যাম্পের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।
তারও আগে ২০২১ সালে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি স্যাটেলাইটে ধারণ করা চিত্র বিশ্লেষণ করে জানায়, অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে কমপক্ষে ৬০টি ভবনের দ্বিতীয় ক্লাস্টারের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে চীনা সামরিক বাহিনী।
২০২০ সালে চীনা সৈন্যরা অরুণাচলের দিবাং উপত্যকা জেলায় অর্থাৎ ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। ওই সময় দুই দেশের সৈন্যদের মাঝে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে অরুণাচলের ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে ডোইমরু নালার ওপর একটি কাঠের সেতু তৈরি করে চীনা সামরিক বাহিনী।
সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশ অন্তত ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলে নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চীন ভারত যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে। এ দিকে ভারতের মণিপুর রাজ্য আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রবিবার রাজ্যের পুলিশের অস্ত্রাগারে হামলা চালানোর খবর মিলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব ইম্ফল জেলায় মণিপুর রাইফেলসের দুটি ব্যাটালিয়নের অস্ত্রাগার লুটের উদ্দেশ্যে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত।
এর আগে শনিবার জিরিবাম জেলায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬ জন। আগের দিন শুক্রবার বিষ্ণুপুরে রকেট হামলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। নামানো হয়েছে অতিরিক্ত সেনা।
নতুন করে সহিংসতার জেরে ক্ষমতাসীন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং পদত্যাগ করতে পারেন। তবে তার দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানানো হয়নি
বিএনএনিউজশামীমাচৌধুরীশাম্মী/এইচমুন্নী