।। ফেরদৌস আহমাদ বাবুল ।।
বিএনএ, নেত্রকোণা: মন্ডলবাড়ির মালিকের নাকি শেয়ালের মত বুদ্ধি। বুদ্ধির কারণে অতিষ্ট গ্রামবাসী। মালিককে ঘায়েল করার জন্য গ্রামের কেউ একদিন বুদ্ধি করে মন্ডলবাড়ির আঙিনায় টানিয়ে দেয় ‘শেয়ালবাড়ি’র সাইনবোর্ড। টিভির এই কমেডি নাটকের ‘শেয়ালবাড়িকে পিছনে ফেলে নেত্রকোণার উত্তরে ভারতীয় সীমান্তের মানুষের মুখে মুখে এখন বাস্তব ‘শেয়ালবাড়ি’। জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামের আজিজুল হক শেয়াল পোষেন। তার বাড়িটিই ‘শেয়ালবাড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
জানা যায়, আজিজুল হক (৩৭) অটোরিক্সা চালান। তার স্ত্রী সুমা আক্তার (৩২) বাড়িতে হাঁস, মুরগী ও ছাগল পোষেন। পাশাপাশি পোষেন একটি শেয়াল। এই শেয়াল থাকে সর্বদা মুক্ত। বাড়ির হাঁস-মুরগীর সাথে একত্রে একই রকম খাবার খায়, ঘুরে বেড়ায়, বসবাস করে। অন্যান্য প্রাণী থেকে রক্ষাও করে হাঁস-মুরগীদের। শেয়ালটি কাউকে কামড়ায় না বা কারো অন্য কোন ক্ষতি করে না। কখনও কখনও এটি বাড়ির পাশের পাহাড়ে জঙ্গলে চলে যায়। আবার, লালু বলে ডাকলেই দৌড়ে ফিরে আসে। এলাকার কুকুরের সাথেও গড়ে উঠেছে তার সখ্যতা। মাংসাশী প্রাণী শেয়ালের এমন উল্টো আচরণে মুগ্ধ সবাই। দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে শেয়ালবাড়িতে।
আজিজুল হক জানান, প্রায় দেড় বছর আগে উপজেলার পার্শবর্তী নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও গ্রামে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে একটি জঙ্গলে আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে তিনটি শেয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। এখান থেকে একটি বাচ্চা সখের বশে নিজের সাথে করে নিয়ে আসেন। তখন বাচ্চাটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস। পরে বাচ্চাটির নাম রাখা হয় লালু। লালুকে প্রথম দিকে বোতলে ভরে দুধ খাওয়ানো হয়। একমাস পর থেকে হাঁস, মুরগী ও ছাগলের সাথে একত্রে ভাত খাওয়ানো শিখানো হয়। এভাবেই বাড়ির মানুষসহ সকল প্রাণীর সাথে শেয়ালটির একপ্রকার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
সুমী আক্তার বলেন, শেয়ালের বাচ্চাটিকে নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করে বড় করছি। লালু নামে ডাকলে কাছে আসে। মুরগীগুলো পাশের টিলায় যায়। সন্ধ্যার সময় লালু এদের তাড়িয়ে বাড়িতে আনে। কারো ক্ষতি করে না।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কনিকা সরকার বলেন, শেয়াল মাংসাশী প্রাণী। পরিবেশ ও অভ্যাসগত কারণে এটির বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে থাকতে পারে। তবে শেয়াল জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু বহন করে। এ জন্য শেয়াল ও বাড়ির মানুষ সকলেরই টিকা নেওয়া ও সাবধানে থাকা উচিত।
বিএনএনিউজ/বিএম/ হাসনাহেনা