বিএনএ, ঢাকা: সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সাক্ষাৎ করেছেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত শুরু হয় এই আলোচনা। বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে চাউর হলেও বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন। তবে শনিবার রাতে (৮ জুলাই) দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে সাফাদি মেন্দি নিজেই দাবি করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে নুরের সঙ্গে তার অন্তত তিন ঘণ্টার বৈঠক হয়।
মেন্দি এন সাফাদি বলেন, ‘আমরা দুবাইয়ের সিটি মলে স্টারবাকস কফিশপে দেখা করেছিলাম। তখন আনুমানিক বিকেল ৩টা, ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ। ৩ ঘণ্টার বৈঠক শেষে আমরা আবারও সাক্ষাতের জন্য একমত হই এবং ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনার কথা ছিল।’
সাফাদি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জিততে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য নুর আমার সাহায্য চায়। আমার আদর্শের সঙ্গে তার আদর্শের মিল রয়েছে। সে (নুর) বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের দ্বার খুলতে চায়।’
মোসাদের অ্যাজেন্ট হিসেবে পরিচিত সাফাতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের প্রচারণায় বিশ্বাস করে এবং তারা ইরায়েলের কথা শুনতে চায় না। নুর বোঝে ফিলিস্তিনের সংগঠনগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভূমি দখল করতে চায়।’
তবে সাক্ষাতের খবর নাকচ করে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর একাধিকবার বলেছেন, এ সবই অপপ্রচার।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমার সঙ্গে মেন্দি এন সাফাদির বৈঠকের অভিযোগ যারা তুলছে, তারা পারলে একটি ভিডিও দেখাও৷ আমি স্পষ্ট বলেছি, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আমার কোনো বৈঠক হয়নি। মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সরকারের নেতাকর্মীরা বৈঠক করেছেন। আমি দেশের বাইরে গেছি। আমার সঙ্গে অসংখ্য মানুষ ছবি তুলেছে। কে কোথা থেকে কোন ছবি তুলেছে, তা আমি জানি না। এখন তারা ছবি নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, সেটা এডিটেড ছবি বলে আমার মনে হয়েছে।’
২০১৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মেন্দি এন সাফাদির নাম প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। শিপন কুমার বসু নামের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় মেন্দির সঙ্গে আসলামের বৈঠক হয়। তিনি ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগ্রায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সে সময় মেন্দি ভারত সফর করছিলেন। মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবর বের হওয়ার পর ওই বছরের ১৫ মে আসলামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক বছর পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে তার বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতি মামলাসহ একাধিক মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মেন্দি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট। তিনি মোসাদের এজেন্ট—এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার তিনি যে মোসাদের এজেন্ট নন, সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মেন্দি এন সাফাদিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন ছেপেছে। এসব প্রতিবেদন থেকে তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা গোলান মালভূমি এলাকার বাসিন্দা মেন্দি এন সাফাদি ইহুদি নন। তিনি দ্রুজ ধর্মাবলম্বী। দুবাইয়ে ব্যবসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার ‘ফাইভ ফ্যাক্টস অ্যাবাউট ইসরায়েলি দ্রুজ, আ ইউনিক রিলিজিয়াস অ্যান্ড এথনিক গ্রুপ’ নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৬ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলাম ও হিন্দুধর্ম এবং গ্রিক দর্শন এই ধর্মের ভিত্তি। প্রতিবেদন বলছে, এই ধর্মের আবির্ভাব ১১ শতকে। সিরিয়া ও লেবাননে দ্রুজ সম্প্রদায়ের ১০ লাখের ওপর মানুষ আছেন। এ ছাড়া ইসরায়েল ও জর্ডানে দ্রুজরা আছেন। ইসরায়েলে মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ দ্রুজ। সংখ্যালঘু আরব হওয়া সত্ত্বেও দ্রুজরা ইসরায়েলে ইহুদিদের মতো সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকেন। সেনাবাহিনীতে দ্রুজদের একটি আলাদা পদাতিক ইউনিট আছে, যেটির নাম ‘হেরেভ’ (তরবারি ব্যাটালিয়ন)।
মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমর্থক। ইসরায়েল ২০১৮ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করে। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের জন্ম হয়। সে সময় ওই অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পান। তবে তারা কখনোই নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি। নাগরিকত্ব আইনে ফিলিস্তিনিদের আইন করে সম–অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৯ সালে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই আইনের পক্ষে মেন্দি এন সাফাদি তার অবস্থানের কথা জানান।
বিএনএ/এমএফ