22 C
আবহাওয়া
১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » মৃত্যুপুরী রাউজান: বিএনপি’র খুনের রাজনীতি থামছে না!

মৃত্যুপুরী রাউজান: বিএনপি’র খুনের রাজনীতি থামছে না!


বিএনএ, ঢাকা : কিছুতেই থামছে না রাউজানে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকারের খুনের রাজনীতি! কমিটি বিলুপ্তি, কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি দায়িত্ব শেষ করেছে। ফলে চট্টগ্রামের রাউজানে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গত ১৩ মাসে খুন হয়েছেন অন্তত ১৬ জন।

YouTube player

সবশেষ খুনের শিকার হয়েছেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারি বিএনপি কর্মী ও ব্যবসায়ি আব্দুল হাকিম। তাকে মঙ্গলবার বিকালে রাউজান মদুনাঘাট ব্রীজ সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকায় প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে পালিয়ে যায় দৃর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আব্দুল হাকিমকে চট্টগ্রাম নগরীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যাকান্ডের জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রুপ গোলাম আকবর খন্দকার গ্রুপকে দায়ি করেছে।

নিহত আবদুল হাকিম বাগোয়ান ইউনিয়নের পাচখাইন গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই এলাকায় তার প্রতিষ্ঠিত হামিম এগ্রো নামে একটি গরুর খামার আছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আবদুল হাকিম, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হলেও তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাউজানে আবারও সক্রিয় হয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়া। তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন ১৯৯৩ সালে। প্রথমেই খুন করেন পূর্ব গুজরার ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনকে। পরবর্তী এক দশকে তার বাহিনীর হাতে রাউজানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা-কর্মী নিহত হন।
এরপর বিএনপি আমলে ক্রসফায়ারের তালিকায় পড়ে গা ঢাকা দেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগের আমলে গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পেয়ে, ৫ আগস্টের পর উপজেলায় আবারও সক্রিয় হয়েছে বিধান বাহিনী।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ বাহিনীর ক্যাডার রায়হান ও ধামা ইলিয়াস রাউজানে খুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় আরেক সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও আলোচনায় আসে রায়হানের নাম। এ ছাড়া, নগরীর বাকলিয়ার ডাবল মার্ডারের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে রায়হানকে। স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্টের পর রাউজানের কদলপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে রায়হান।
এছাড়া রাউজানের ত্রাস ফজল হক ও জানে আলমের একটি গ্রুপও খুন, সন্ত্রাস, সহিংসতার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

প্রসঙ্গত গত ২৯ জুলাই বিকালে চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কের রাউজানে সত্তারহাট এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তাঁর জীপ গাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারিদের বেশ কিছু মোটর সাইকেল।

নেতাকর্মীদের মানব প্রচীর তৈরি এবং দৌড়ে পালিয়ে মোটর সাইকেল যোগে স্থান ত্যাগ না করলে গোলাম আকবর মবের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

এই ঘটনায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
গত বছরের ৬ই নভেম্বর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ নানান অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে শোকজ করা হয়।

শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ধনী ব্যবসায়ীর তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়, ওমান বসবাসরত সিআইপি ব্যবসায়ী ইয়াসিনের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি, চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইয়াসিনের রাউজানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, সিআইপি ব্যবসায়ী মো. ফোরকানের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফোরকানকে নির্মম শারীরিক নির্যাতন, অনুগত সন্ত্রাসীরা দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থানরত রাউজানের ব্যবসায়ীদের ওপর ঢালাও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকা আতঙ্কের জনপদে পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্বের জেরে এখানে খুন-খারাবি থামছে না। পাল্টাপাল্টি হামলা, হত্যাকাণ্ডে বিপর্যস্ত পুরো রাউজান। ‘স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি। এমন নিয়ন্ত্রণহীন অরাজকতা আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরে কেউ দেখেনি।

গুলি, হামলা ও পাল্টাপাল্টি খুন এখন রাউজানের নিত্যদিনের ঘটনা। গত ১৩ মাসে খুন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি কর্মী আব্দুল হাকিম এবং যুবদলের পাঁচজন হলেন সেলিম, কমর উদ্দিন, ইব্রাহিম, দিদারুল ও মানিক আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগের চারজন হলেন আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়া, আবু তাহের ও মুহাম্মদ হাসান। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যবসায়ীও খুন হয়েছেন।

রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নিয়মিত হামলা, পাল্টা হামলা ও খুনের ঘটনা ঘটছে। গত ১৩ মাসে থানার তিনজন ওসিকে বদলি করা হয়েছে। তবু শান্তি ফিরে আসেনি রাউজানে। হাজার হাজার মানুষ রাউজান ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

বিএনএ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম

Loading


শিরোনাম বিএনএ