বিএনএ ডেস্ক : গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের “ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ” অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের “মাস্টারমাইন্ড” হিসেবে বিশ্বমঞ্চে মাহফুজ আলমকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই আন্দোলন খুব সুশৃঙ্খল ছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এছাড়াও এত বড় আন্দোলন হয়েছে মানুষ জানতোই না— কে আন্দোলনের লিডার?
মাহফুজকে দেখিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “তার কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যেকোনো তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনারা প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাত তালি হোক।” এ সময় বিলক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।
কিন্তু ৭ মাস পর জুলাই আন্দোলনের আরেক মাষ্টার মাইন্ডের খোঁজ মিলেছে। আর তিনি হচ্ছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন ‘বাংলাদেশে জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে দমন–পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পর সরকার পরিবর্তন হয়েছিল’
বিবিসির ওয়েবসাইটে গত ৫ই মার্চ হার্ডটক অনুষ্ঠানের এই পর্বটি প্রকাশ করা হয়। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে ভলকার টুর্কের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসির উপস্থাপক স্টিফেন সাকার।
অনুষ্ঠানে গাজা, সুদান, ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে স্টিফেন সাকার ভলকার টুর্ককে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ মেনে এসব পরিস্থিতি সমাধানে জাতিসংঘকে ক্ষমতাহীন মনে হচ্ছে। এর জবাব দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন ভলকার টুর্ক।
ভলকার টুর্ক বলেন, ‘আমি আপনাকে উদাহরণ দিচ্ছি, যেখানে এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। আমি গত বছরের বাংলাদেশের উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি জানেন জুলাই–আগস্টে সেখানে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।’ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে ছাত্রদের আন্দোলন দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য বড় আশার জায়গা ছিল আসলে আমরা কী বলি, আমরা কী করতে পারি এবং আমরা ওই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করি।আমরা প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করি, যদি তারা এতে জড়িত হয়, তার অর্থ দাঁড়াবে তারা হয়ত আর শান্তিরক্ষী পাঠানোর দেশ হিসাবে থাকতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে আমরা পরিবর্তন দেখলাম।’
ভলকার টুর্ক বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলেন, তিনি আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বললেন, আপনি কি একটি তথ্যানুসন্ধানী দল পাঠাতে পারেন? পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিতে পারেন? এবং সেখানে যা ঘটছে, তা তদন্ত করতে বললেন। আমরা এগুলোই করেছিলাম। এবং এটি কার্যত সাহায্য করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমরা একটি অবস্থান নেওয়ায়, আমরা কথা বলায় এবং তাদেরকে সহযোগিতা করায় ছাত্ররা আমাদের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ ছিল।’
প্রশ্ন উঠেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বাংলাদেশে জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে দমন–পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পরই কী সেনা বাহিনী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানতে অস্বীকার করেছিলেন? তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে? সেই প্রশ্নও উঠেছে। আরও প্রশ্ন উঠেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নির্দেশনামূলক বার্তা দেওয়ার এখতিয়ার রাখে কীনা?
শামীমা চৌধুরী শাম্মী