22 C
আবহাওয়া
৮:৫৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এপিএসও হাজার কোটি টাকার মালিক!

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এপিএসও হাজার কোটি টাকার মালিক!

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এপিএসও হাজার কোটি টাকার মালিক!

বিএনএ, ঢাকা: চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর তার বড় সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরপর তিনবার সংসদ সদস্য হন। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৫ বছর ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ৫ বছর ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাজ্যে চার হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৩৬০টি বাড়ি কিনে তুমুল সমালোচিত হওয়া ভূমিমন্ত্রীর সহকারি ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর পুত্র রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম। ভূমিমন্ত্রীর র্স্পশে তিনিও এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০ বছর আগেও পারিবারিকভাবে তেমন কোনো সম্পদ ছিল না রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েমের। কিন্তু ভূমিমন্ত্রীর এপিএস হওয়ার পর টেন্ডার বাণিজ্য, দলীয় পদ বিক্রি, মনোনয়ন বাণিজ্য, ঠিকাদারি, ঝুট ও ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশে নামে-বেনামে তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেটে রয়েছে সুবিশাল শোরুম। এছাড়াও কয়েক হাজার শতক জমিও কিনেছেন পটিয়া, আনোয়ারা, রাউজান ও কর্ণফুলীতে। দুবাই ও থাইল্যান্ডেও সায়েমের বাড়ি আছে। আছে একাধিক দোকান। টাকা পাচার করে বিদেশে এসব সম্পদ করেছেন তিনি।

YouTube player

আনোয়ারায় অবস্থিত বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কোরিয়ান ইপিজেডে ‘ইয়াংওয়ান’ কারখানায় নাজ এন্টারপ্রাইজ ২০১৭ সাল থেকে বছরে ৩০০ কোটি টাকার কনস্ট্রাকশন ও বিভিন্ন পণ্য সাপ্লাইয়ের কাজ করে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক জসিম উদ্দিন হলেও এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মূলত এপিএস সায়েম।

কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড সার কারখানায় ২০১১ সাল থেকে কোনোরকম টেন্ডার ছাড়াই সার লোড-আনলোডের কাজ করে আসছেন আরএ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন। এপিএস সায়েমের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়েই বছরে পাঁচ কোটি টাকার লোড-আনলোড কাজ করতেন তিনি। কাফকোতে তিন কোটি টাকার ক্যাজুয়াল শ্রমিক সাপ্লাইয়ের কাজও করত এই আরএ এন্টারপ্রাইজ। রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে বছরে তিন কোটি টাকার ক্যাজুয়াল শ্রমিক সাপ্লাই ও এক কোটি টাকার সার উৎপাদন কাজও করত তারা। কাগজে-কলমে এটির মালিক অন্যজন হলেও মূলত সায়েম এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার মনোনীত প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিলে কারখানার কার্যক্রমে বাধা তৈরি করতেন সায়েম। এ ছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডে তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেএম করপোরেশন এবং আজওয়াদ এন্টারপ্রাইজ নামে কনস্ট্রাকশন ও পণ্য সাপ্লাই কাজ হাতিয়ে নেন। পরে এসব কাজে ১৫ শতাংশ লাভে সাব-ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি।

রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রঘুপতি সেন মিলে ২০২২ সালে পটিয়ায় প্রায় ২৮০ শতক জমি ক্রয় করেন। এছাড়া আনোয়ারায় সিইউএফএল সার কারখানার পাশে কর্ণফুলী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ও এপিএস সায়েম মিলে প্রায় ৮০ শতক জমি ক্রয় করেন। আনোয়ারা মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে ৮০ শতক জমি কিনেছেন বছরখানেক আগে। ফকিরনিরহাট এলাকায় গরুর বাজারের পাশে ৪০ শতক এবং আনোয়ারা বৈরাগ পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে রয়েছে আরও প্রায় ৮০ শতক জমি। পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের নয়াহাটের পাশে নুরুল আলম সওদাগরের পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ডে প্রায় ৩৬০ শতক জমি কিনেছেন তিনি। সায়েমের শ্বশুরবাড়ি রাউজানে। সেখানেও নামে-বেনামে অনেক জমি কিনেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে এপিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশের গলিতে রয়েছে নামে-বেনামে বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাট। প্রথম ফ্ল্যাটটি নেন চার বছর আগে। পরেরটি কেনেন এক বছর আগে। তাঁর রয়েছে ব্যক্তিগত দুটি গাড়ি। ঢাকার তেঁজগাওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাশে রয়েছে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট। জিইসি মোড়ের এশিয়ান হাসপাতাল, গোল পাহাড়ের মোড়ে চট্টগ্রাম হেলথ পয়েন্ট, সার্সন রোডের নিউ হ্যাপি লাইফ হাসপাতালের নামে-বেনামে শেয়ার রয়েছে তার। ১০ কোটি টাকা সিকিউরিটি মানি দিয়ে ইউনি গ্যাসের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ডিলারশিপও ক্রয় করেন সায়েম।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. জসিম সায়েমের প্রতিনিধি। কনস্ট্রাকশন ব্যবসাগুলো তিনি দেখাশোনা করেন। তাঁর হয়ে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা দেখেন হাইলধরের মোহাম্মদ আনিস। মন্ত্রীর এপিএস হলেও তাকে এতটাই ক্ষমতায়িত করা হয় যে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী নির্ধারণ হতো তার সুপারিশে। তাঁর প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে দলীয় পোস্টারে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও সাইফুজ্জামানের ছবির সঙ্গে দিতে হতো তাঁর ছবিও। মন্ত্রীর অবর্তমানে যে কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে করা হতো প্রধান অতিথি। তাঁর জন্য আলাদাভাবে রাখতে হতো বড় চেয়ার। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত হওয়ায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কর্ণফুলী ছাত্রলীগের উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি চার বছরেও হতে দেয়নি। যারা এটা মানতে পারতেন না, তাদের পড়তে হয়েছে রোষানলে।

সায়েম নিয়ন্ত্রণ করতেন আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা। তার কথা ছাড়া থানায় মামলা দায়ের হতো না। দুই থানার ওসি’র পক্ষ থেকে মাসিক মোটা অংকের মাসোহারা পেতেন ক্ষমতাধর ভূমিমন্ত্রীর এই এপিএস। টিআর-কাবিখা প্রকল্পে যারা বরাদ্দ পেতেন, তাদের কমিশনও দিতে হতো তাঁকে। আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর অবৈধ তেল চোরাকারবারি আব্দুস শুক্কুর এবং ইয়াবা ব্যবসায়িদের থেকে মাসিক মাসোহারা নিতেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পালিয়েছেন লন্ডনে। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড খ্যাত এপিএস রিদুয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম আনোয়ারা গহিরা হয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ