বিএনএ,চট্টগ্রাম: মো. খোরশেদ আলম (৪২) পড়ালেখা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘ওয়ার্ড বয়’ হিসেবে চাকরি করতেন খোরশেদ আলম। পরে চাকরি ছেড়ে কুমিল্লায় চেম্বার দিয়ে বসেন। পরিচয় দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক! কুমিল্লায় অবশ্য ধরা পড়ে যান। পরে চলে যান মাগুরায়। সেখানে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা শুরু করেন। বেশি দিন পরিচয় গোপন রাখতে পারেননি সেখানেও। ধরা পড়লে এবার ডাক্তার সেজে প্রতারণার জন্য বেছে নেন চট্টগ্রামকে। কিন্তু আবার ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে। এসময় তার কাছ থেকে ভুয়া ডাক্তারি আলামতসহ সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টায় নগরের আকবরশাহ থানার হাজী ইব্রাহিম মেনসন এলাকার কাট্টলি মেডিকেল হল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিষয়টি জানিয়েছেন আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন।
গ্রেপ্তার খোরশেদ আলম হাটহাজারী থানার আব্দুর রহিমের ছেলে। ভুয়া ডাক্তার পরিচয় দিয়ে থাকতেন নগরের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায়।
পুলিশ জানায়, খোরশেদ আলম মূলত ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন ওয়ার্ডবয় ছিলেন। পরে নিজেই ডাক্তার সেজে কুমিল্লায় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতেন। ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত কুমিল্লার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর মাগুরায় স্থানীয় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিউরো মেডিসিন এবং মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দুই মাস ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে ধরা পড়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত এই ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।
ভুয়া ডাক্তার ধরায় পুলিশকে সহায়তা দেয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘করোনা মেডিসিন ব্যাংকের’ উদ্যোক্তা লায়ন ডা. মেসবাহ উদ্দিন তুহিন বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার মতো মহৎ একটি পেশাকে অষ্টম শ্রেণি পাস একজন প্রতারক কিভাবে এমন নীচে নামাতে পারে ভাবতেই অবাক হই।’
আকবরশাহ্ থানার ওসি মো. জহির হোসেন জানান, নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছে বলে পরিচয় দিত খোরশেদ আলম। নামের পাশে লিখতেন এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজী) ডিগ্রী। কিন্তু আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসবের কোনো ডকুমেন্ট প্রদান করতে পারেননি তিনি। পরে স্বীকার করেন তিনি প্রকৃতপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করতেন।
বিএনএনিউজ/মনির