27 C
আবহাওয়া
১:৫৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৭, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » কেমন হবে জামায়াত সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার ও হাওয়া ভবনের মালিক লবির লড়াই?

কেমন হবে জামায়াত সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার ও হাওয়া ভবনের মালিক লবির লড়াই?


বিএনএ, ঢাকা : খুলনা-৫ আসনটি ফুলতলা, ডুমুরিয়া উপজেলা এবং গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১০৩ তম আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি, হাওয়া ভবনের মালিক, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবি।

আওয়ামী লীগবিহীন হিন্দু অধ্যাষিত খুলনা- ৫ সংসদীয় আসনে কে হবেন জনপ্রতিনিধি? এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন তথা সারাদেশের মানুষের মধ্যে কৌতূহল, জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই।

আসুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সাল থেকে২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪টি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করি এই আসনে কে হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের জনপ্রতিনিধি?

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯ শত ৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সালাউদ্দিন ইউসুফ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ২ শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ২ শত ৩৯ ভোট। জামায়াত ইসলামী প্রার্থী গোলাম পরওয়ার পান ২৬ হাজার ২ শত ১১ ভোট।

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির ডাক্তার গাজী আব্দুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫ শত ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সালাউদ্দিন ইউসুফ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ১ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৫ শত ৮৪ ভোট। জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী একেএম গাউসুল আজম পান ১৫ হাজার ৯শত ৬০ ভোট।

২০০১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ১ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৩ শত ৪৪ জন। বিএনপি ৪ দলীয় জোট সঙ্গী হিসাবে জামায়াত ইসলামীকে আসনটি ছেড়ে দেয়। নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার বিজয়ী হন। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৭ শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১ হাজার ১ শত ৯২ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৭ শত ৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ১ শত ৯৪ জন। বিএনপি এবারও মিত্র জামায়াত ইসলামীকে ছেড়ে দেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬ শত ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর গোলাম পরওয়ার। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ৩ শত ২২ ভোট।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াত ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শাহীদ আলম, কাস্তে প্রতীকে সিপিবি চিত্ত রঞ্জন গোলদার,হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

কিন্তু ভোটের আগের রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন প্রশাসনের সহযোগীতায় নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রাতের ভোট খ্যাত এই নির্বাচন কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৪টি নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম সংসদে জামায়াত ইসলামী বিজয়ী হয়।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর খুলনা-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড আওয়ামী লীগ, জামায়াত ইসলামী বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৩১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৩২%, বিএনপি ২২.৭৮%, জামায়াতে ইসলামী ১৪.২৭%, জাতীয় পার্টি ১৭.৯৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৬৪%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৪১%, বিএনপি ২৬.৮৯%, জাতীয় পাটি ১৮.৪৯%, জামায়াতে ইসলামী ৯.৪২ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৭৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৩৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৪৩%, ৪দলীয় জোট ৪৯.৫৬%, জাতীয় পার্টি ১.৭৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.২২% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৪৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৬.৫৪%, ৪ দলীয় জোট ৪১.১৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.২৮% ভোট পায়।

খুলনা ৫ সংসদীয় আসনটি পেতে জামায়াত ইসলামী মরিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু ভোট পেতে দলটি সম্প্রতি ডমুরিয়ায় সনাতন হিন্দু সমাবেশ করেছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এখন হিন্দুদের স্লোগান একটাই সব মার্কা দেখা শেষ- দাঁড়িপাল্লার বাংলাদেশ। বাংলাদেশে হিন্দুদের নিয়ে এখন আর রাজনীতি করার সুযোগ আর নেই। হিন্দুদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, হিন্দুরাও এখন দাঁড়িপাল্লার পক্ষে এক হয়েছে।

বিএনপিও বসে নেই। দলটির মনোনীত প্রার্থী হাওয়া ভবনের মালিক আলী আহগর লবি জামায়াত ইসলামীকে কোনটাসা করতে একাত্তর সালে ও ২০০১ সালে নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর জামায়াত ইসলামী নির্যাতনের ফিরিস্থি তুলে ধরছেন। হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনা-৫ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। ১৯৯১ সাল থেকেই আসনটি ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ বাদে সব কটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দসহ দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী মামলার হুলিয়া নিয়ে পলাতক অথবা রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয়।

প্রসঙ্গত, সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর মধ্যে সরাসরি ভোট যুদ্ধ হবে।

বিএনপির মধ্য দলীয় কোন্দল রয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে জামায়াত ইসলামী পুরোপুরি রয়েছে কোন্দল মুক্ত এবং ঐক্যবদ্ধ। যা দলটি বিএনপির চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে।

বিএনপি ও জামায়ত উভয়ে চাইবে আওয়ামী লীগের দুর্গ খ্যাত খুলনা-৫ সংসদীয় আসনটি দখলে নিতে। সেই ক্ষেত্রে হিন্দু ভোটার ও আওয়ামী লীগের ভোট ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে এমনটা মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ