বিএনএ গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ের পরেই মাত্র আধা ঘন্টার গরম বাতাসে কয়েকশ কৃষকের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।এক রাতের মধ্যে চার উপজেলার শত শত হেক্টর জমির ধানের শীষ সবুজ থেকে সাদা হয়ে নষ্ট হয়েছে।
জেলার চার উপজেলার অন্ততঃ ১০টি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সারা বছর কি খেয়ে দিন কাটাবেন এখন সেই চিন্তায় পড়েছেন তারা। ধার দেনা, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব কৃষকরা তাদের জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধান নষ্ট হওয়ায় কিভাবে ধার দেন ও ঋণ শোধ করবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের শেফালী বিশ্বাস (৫৮)। ঘরে অসুস্থ পঙ্গু স্বামী আর চার মেয়ে। এবার ৩ বিঘা জমিতে ধান রোপন করে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যাতে সারা বছরের খাবার যোগান হয়। কিন্তু কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের পর গরম বাতাসে তার সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের দয়ানন্দ ঘরামী ও জুড়ান বিশ্বাস বলেন, রাতে গ্রামের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। মাত্র বিশ মিনিটের গরম বাতাসে তার জমির ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এক ছটাক ধানও ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে কি খাবেন চিন্তায় এখন সেই চিন্তায় আছেন বলে জানান তারা।
একই গ্রামের কৃষক রঞ্জিত সেন, সুরেশ সেন,দেবাশীষ মন্ডল, নকুল ঘরামী, চিত্তরঞ্জন ঘরামী বলেন, এ বছর ধার দেনা, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেলো। দেশে এখন করোনার সঙ্গে লকডাউন চলছে। সারা বছরের খাবার তো দূরের কথা এখন ধার দেনা কিভাবে শোধ করা যাবে সেই চিন্তার শেষ নেই। এখন মরণ ছাড়া আর কোন পথ নেই বলে জানান তারা।
ওই গ্রামের অপর্না রানী বলেন, রাত ১০টার দিকে কাল বৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার বইতে শুরু করে। এর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে গরম বাতাস আসে। তখন বুঝা সম্ভব হয়নি যে ধানের ক্ষতি হবে। পরের দিন সকালে রোদ ওঠার পর জমিতে গিয়ে দেখা যায় ফুলে বের হওয়া ধানের শীষগুলো শুকিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার যদি সাহায্য সহযোগীতা না করে তাহলে ঋণ করে সারা বছর চলতে হবে বলে জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে এবছর ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে এখন ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত রোববার (০৪ এপ্রিল) রাতে জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া, তাড়াইল, পাকুরতিয়া, লেবুতলা, বর্ণি, কুশলী, পাটগাতী, বরইহাটি ও গোপালপুর, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাচারতারা, আমতলী, তালপুকুরিয়া, কান্দি, পিঞ্জুরী, হিরণ ও আমতলী, কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ও সদর উপজেলার চর মানিদাহ গ্রামের ওপর দিয়ে কালবৈশাখীর গরম হাওয়া প্রবাহিত হয়।
এরপর সোমবার (০৫ এপ্রিল) সকালে কৃষকেরা তাদের জমিতে গিয়ে দেখেন সব ধান সাদা হয়ে গেছে। ক্ষেতের উঠতি বোরো ধানের যেসব শীষে কেবল মাত্র “দুধ” এসেছে সেই ধানের শীষ সব চিটায় পরিণত হয়ে গেছে। যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সে সব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় শতকরা বিশ ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল উদ্দিন বলেন, কৃষকরা খবর দেয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন তারা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় জমির ধানগুলো সাদা বর্ণ ধারণ করেছে এবং নষ্ট হয়ে গেছে। এবছর টুঙ্গিপাড়ায় ৮ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ধান নষ্ট হবার কথা স্বীকার করে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গরম বাতাসে জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী ও সদর উপজেলার বোরো ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠে কাজ করছেন। তবে এখন পযর্ন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি ভাঙ্গা ধান গবেষণা ইনিষ্টিটিউটকে জানানো হয়েছে। তাদের একটি দল গোপালগঞ্জে এসে বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর তারা করণীয় ঠিক করবেন বলে জানান ড. অরবিন্দ কুমার রায়।
বিএনএনিউজ/আরকেসি