34 C
আবহাওয়া
৮:১৫ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৩ (রাজশাহী-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫৩ (রাজশাহী-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে রাজশাহী-২ আসনের হালচাল।

রাজশাহী-২ আসন 

রাজশাহী-২ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সমূহ নিয়ে গঠিত। এই আসনকে রাজশাহী সদর আসন বলা হয়। এটি জাতীয় সংসদের ৫৩ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কবির হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী-২ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ১ শত ৫০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির কবির হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ১৪ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আতাউর রহমান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ১ শত ৪১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ৯ শত ৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণতান্ত্রিক ফন্টের সামশুল হক হাসনাত। তিনি পান মাত্র ১ হাজার ৩ শত ২৭ ভোট! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কবির হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩ শত ৭২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬ শত ৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির কবির হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৪ শত ৭১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৮ শত ৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন:বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু বিজয়ী

২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫ শত ২৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ১ শত ৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪ শত ৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৬ শত ৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: ফজলে হোসেন বাদশা জয়ী

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১২ হাজার ২ শত ৩৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে মনোনয়ন দেন। তার প্রতীক ছিল নৌকা। তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৫ শত ৯৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৫০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, হাতুড়ী প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, হাতুড়ী প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচিত হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৯ শত ৭৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়সাল হোসেন, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির এনামুল হক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৩ শত ২৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

রাজশাহী- ২ আসনে নবম, দশম ও একাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসাবে নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সহসভাপতি মাহাফুজুল আলম লোটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ১৭ বছর টানা রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র ও অষ্টম জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন, সদস্য সচিব ও মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ সেলিম।

এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী সিপিবির এনামুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়সাল হোসেন দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সমূহ নিয়ে গঠিত রাজশাহী- ২ আসনে পঞ্চম সংসদে জামায়াতে ইসলামী, ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওয়াকার্স পাটি বিজয়ী হন।

YouTube player

 

 

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রাজশাহী-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১২.৮৮%, বিএনপি ৪৩.৪০%, জাতীয় পার্টি ১.৫৯%, জামায়াতে ইসলামী ২১.৫০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.৬৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.০৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৭৪%, বিএনপি ৪৩.৯৯%, জামায়াতে ইসলামী ১৬.৯৪%, জাতীয় পাটি ৫.৫৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৭৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৬২%, ৪ দলীয় জোট ৫৯.৫৭%, জাতীয় পার্টি ৩.৬১%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.২০% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.১৭%, ৪ দলীয় জোট ৪২.১৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.৭০% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সমূহ নিয়ে গঠিত রাজশাহী- ২ আসনটি আওয়ামী বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কাস পাটি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা রয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দূর্গ খ্যাত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কাস পার্টির মাধ্যমে নেতৃত্বের দখল নেয়।

এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল রয়েছ। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে গোপনে কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা রাখছে। দলটির নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। স্বতন্ত্র প্রাথী হিসাবে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন না করলে লাভবান হবে বিএনপি। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতায় ধারাবাহিকতা নেই। তবে তাদের বেশ ভোট রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী-২ আসনে রাজনৈতিক সমীকরণ ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়াকার্স পাটির জাতীয় সংসদের ৫৩ নম্বর রাজশাহী-২ আসনে নেতৃত্ব হারানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না।

বিএনএ/ শিরীন,ওজি,ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ