চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন ফ্রিল্যান্সারকে আটকে রেখে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দশ লাখ টাকা এবং অনলাইন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগে জড়িত সন্দেহে পুলিশের সাত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ডিবি- উত্তর/দক্ষিণ) সাদিরা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তাদের পুরো টিমটাকে আমরা আপতত ক্লোজ করে রেখেছি। যার দোষ আছে সে রক্ষা পাবে না”।
তবে তিনি দাবি করেন, বিটকয়েনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি এখনো তাদের কাছে স্পষ্ট না। এভাবে টাকা নেয়া সম্ভব কি না সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ফ্রিল্যান্সার আবু বকর সিদ্দিক জানান, “পুলিশ আমার কাছ থেকে এতগুলো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার আমাকেই মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।”
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার রাতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন গুলবাগ আবাসিক এলাকার একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন তিনি। তখন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল আবু বকর সিদ্দিককে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, মনসুরাবাদ গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।
সেখানে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন ও পুলিশের অন্য সদস্যরা মানি লন্ডারিং ও সাইবার ক্রাইমের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আমি তখন তাকে বললাম আমি তো ফ্রিল্যান্সিং করি ১৪ বছর ধরে। কেন আমাকে মামলা দিবেন? উনি আমার কথা শুনলো না। আমার মোবাইল নিয়ে নেয়। আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয় মোবাইল থেকে।”
তিনি জানান, ওই পুলিশ সদস্যরা ভয় দেখানোর পর তিনি তখন দশ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। পরবর্তীতে তিনি পুলিশের দেয়া দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ করে দশ লাখ টাকা অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ট্রান্সফার করেন।
মি. সিদ্দিক বলেন, “ওনাদের টাকা দেয়ার পর আমাকে নন এফআইআর মামলা দিয়ে চিটাগাং কোর্টে চালান করা হয়। সেখানে ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে জামিন পাই আমি।”
তিনি জানান, কোর্টের মাধ্যমে বাড়িতে ফিরলেও পুলিশ তার মোবাইল ফোনটি রেখে দেয়। পরদিন নতুন একটি মোবাইল কিনে বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন। সেখানে তিনি তার অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখেন তার মোবাইল থেকে দুই লাখ ৭২ হাজার ডলার ট্রান্সফার করা হয়েছে।
এই টাকার পরিমাণ বাংলাদেশের টাকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এরপরই তিনি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মি. সিদ্দিক।
এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা সাদিরা খাতুন জানান, “গণমাধ্যমে তার এই অভিযোগ দেখার পর আমরা একটু অবাক হলাম। পরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখলাম, অনলাইন জুয়া খেলার একটা গ্রুপ এই বিটকয়েনটা তার ওয়ালেট থেকে আরেকজনের ওয়ালেটে নিয়ে যায়। পরে ওই ওয়ালেট থেকে আবার আরেকজনের ওয়ালেটে নিয়ে গেছে।”
ভুক্তভোগী আবু বকর সিদ্দিকের অভিযোগের পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মি. সিদ্দিককে গ্রেফতারের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবি কর্মকর্তা রুহুল আমীনসহ ঐ অভিযানের সাথে জড়িত সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে নানা আলোচনার পর একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ডিবি- উত্তর/দক্ষিণ) সাদিরা খাতুন বলেন, “যেহেতু পুলিশের কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় আসছে আমরা প্রাথমিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। এটা আমাদের ইন্টারনাল ব্যাপার। ডিসিপ্লিনের জন্য আমরা যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারি। আমরা তাদের ক্লোজ করেছি।”
তিনি বলেন, “যেহেতু অভিযোগটা একটা টিমের বিরুদ্ধে বা অপারেশনের বিরুদ্ধে আছে। সে কারণে আমাদের এই ব্যবস্থা। তবে তার মানে এই না যে, তারা অপরাধী বলে তাদের ক্লোজ করেছি। তাদের তদন্তের স্বার্থে ক্লোজ করা হয়েছে”।
ফিল্যান্সার আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনছি। অথচ আমাদের বলা হচ্ছে আমরা নাকি মানি লন্ডারিং করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে আপনারা এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের স্বীকৃত কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার জানান, একজনকে অনলাইনে কাজ করে ১০লাখ টাকা আয় করতে ১ থেকে অনেক বছর সময় লাগতে পারে। আবার অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ কেউ কেউ ১/২ বছরেই এই টাকা কামাই করতে পারেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এসজিএন/এইচমুন্নী