28 C
আবহাওয়া
১০:১২ পূর্বাহ্ণ - জুন ২৫, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » বৃহস্পতিবার রাতের দোয়া

বৃহস্পতিবার রাতের দোয়া

বৃহস্পতিবার রাতের দোয়া

ধর্ম ডেস্ক:  আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে দিন ও রাত দিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু দিন ও রাতকে বিশেষভাবে ফঝিতপূর্ণ ও বরকতময় করেছেন। এসময়গুলোতে সঠিকভাবে আমল করলে ইহকাল ও পরকালে শান্তি লাভ হবে। এমন একটি রাত হলো বৃহস্পতিবার রাত।

সর্বশ্রেশ্ঠ পয়গম্বর ও সর্বশেষ নবী( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন- বৃহস্পতিবার ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোযা অবস্থায় থাকি। -সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮।
আরবি হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত জুমাবারের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আরবি মাস নির্ভর করে চাঁদের ওপর । আরবি তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যার পর থেকে। আর শুক্রবার সন্ধ্যায় জুমার দিনটি শেষ হয়।
শুক্রবারের আগের রাতটি খুবই ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতের বিশেষ আমল আল্লাহ পছন্দ করেন।জুমাবার শুরু হলেই কিছু ফজিলতপূর্ণ আমলের দিকে সবার নজর দেয়া উচিত। কেননা জুমার পুরো দিনটিই আমলের ও দোয়া কবুলের উপযুক্ত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।’ -সূরা মুমিন: ৬০
আরবি দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি।

প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, মানুষের জীবন-মৃত্যু, ভালো-মন্দ, রিজিক তথা স্ত্রী-সন্তান-সম্পদ, সুস্থতা-অসুস্থতা সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয় এবং তার নির্দেশে পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দোয়া বড় মাধ্যম।
দোয়ার মাধ্যমে বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে খুব সহজেই সমর্পণ করতে পারেন। দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ –সুনানে তিরমিজি: ২১৩৯
মানুষের কাছে কিছু চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়। আর আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ রাগ হন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।’ –সুনানে তিরমিজি: ৩২৯৫

যে দোয়া করতে অলসতা করে তার সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে হতভাগ্য মানুষ হলো সে, যে দোয়া করতে অলসতা করে।’ –তাবারানি: ৬০

আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসূল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি।’ -সূরা বাকারা: ১৮৬

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রভু খুবই লজ্জাশীল। বান্দা যখন দোয়ার জন্য হাত উঠায়, সে হাত খালি ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জা পান।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৭০

প্রতি বৃহস্পতিবারে আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দাদের নেক ও বদ আমল দায়িত্বশীল ফেরেস্তারা পেশ করে থাকেন মর্মে সহীহ হাদিসে এসেছে। এইজন্যই নবীজী সা. বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। নবীজী সা. ইরশাদ করেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীজী সা. ইরশাদ করেছেন যে, সোম ও বৃহস্পতিবার আমল আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করা হয়। আমি এটা পছন্দ করি যে, যখন আমার আমল এমন অবস্থায় উপস্থাপিত হোক যখন আমি রোযাদার। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৭৪৭)

দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে, আমি দোয়া করেছি। কিন্তু আমার দোয়া কবুল হয়নি।’ [সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

সুরা দুখান

হাদিসে সুরা দুখান পাঠ করার বেশকিছু ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে মারদুবিয়া হজরত আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমআর রাতে অথবা জুমআর দিনে সুরা দুখান তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য জান্নাতে একটি মহল তৈরি করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) সুরা দুখান পাঠ করবে সকাল হওয়ার আগেই তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

হজরত উমামা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে অথবা জুমার দিন সুরা দুখান পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (কুরতুবী)
সুরা দুখান ও সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত

বাইহাকি বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর রাতে এ সুরা এবং সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করে। সে সকালে এমন অবস্থায় জাগ্রত হবে যে, তার সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।

ইমাম তিরমিজি ও বাইহাকি হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা দুখান তেলাওয়াত করবে, সত্তর হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকবে।

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।- আল-বায়হাকী, ৬২০।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরো বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে।- (আল-বায়হাকী, ২৭৬)

দুরুদের অনেক ফজিলত, উপকারিতা ও সওয়াব রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে দরুদ পাঠ করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার একটি নিদর্শন বহন করে।

দোয়া কবুল
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, পাঁচটি রাত এমন আছে যেগুলোতে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১) শুক্রবারের রাত। ২) রজবের প্রথম রাত। ৩) শব-ই-বরাত (শাবানের পনের তারিখের রাত)। ৫) ঈদের রাত (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)। -(বায়হাকী,ঈদের ফজিলত,১৪৯) সংগৃহীত

আরও পড়ুন : কেন বৃহস্পতিবার রাতের আমলের বেশি ফজিলত

বিএনএ,জিএন

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ