বিএনএ,চট্টগ্রাম: বৈশ্বয়িক মহামারির এই কঠিন সময়ে প্রস্তাবিত বাজেট অত্যন্ত সাহসী এবং সময়োপযোগী। পর পর দুই ধাপে মহামারির কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিগ-বিদিগ জ্ঞান-শূন্য হয়ে পড়েছিল ঠিক সেই মুহুর্তে বর্তমান সরকারের ঘোষিত বাজেট দেশের মানুষকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখালো।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিডব্লিউসিসিআই) সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী এ কথা বলেন। নানান সীমাবদ্ধতার মাঝে এই ধরনের সময়োপযোগী বাজেট প্রণয়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন জানান তিনি।
মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন ছিল তবে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরের জেলা সমূহে শিশু ও নবজাতক, নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য, অনকোলজি, ওয়েল্ডিং ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন ইউনিট থাকা সাপেক্ষে নূন্যতম ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল এবং ২০০ শষ্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যহতির প্রস্তাব দেশের স্বাস্থ্য-খাতকে তৃণমূল পর্যায়ে পূনর্গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি মহামারিতে ভেঙ্গেপড়া শিক্ষা-খাতকে পুনরুজ্জ্বীবিত করবে। কৃষি-পল্লী উন্নয়ন এবং কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে মহামারির এই দুঃসময়ে দেশের খাদ্য-নিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাত, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগনের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে এবং মানুষের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা লাঘব হবে। মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে।
তিনি বলেন, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে নানামুখী প্রস্তাবনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন হলে, দেশের নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং মহামারি করোনায় সব-চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তারা পুনরুজ্জ্বীবিত হবে। নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা করা, সিএমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা বাজেটের ইতিবাচক দিক। দরিদ্র নারীদেরকে ক্ষুদ্র বীমার আওতায় আনার প্রস্তাব তৃণমূল পর্যায়ে নারীদেরকে ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে। এছাড়াও নারী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারীর মানবিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুবিধা বৃদ্ধি, নারী কন্ঠস্বর ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীদের জন্য অবকাঠামো ও যোগাযোগ পরিসেবা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করার প্রস্তাব নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
চিটাগাং উইম্যান চেম্বার সভাপতি বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নারীদের জন্য প্রস্তাবিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও আইটি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংশনীয়। মহিলাদের জন্য ঢাকায় কমিউনিটি নার্সিং ডিগ্রী কলেজ স্থাপন, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পিছিয়ে পড়া নারীর উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি। তবে নারী উদ্যোক্তাদের একটি বড় খাত হচ্চে বিউটি পার্লার ব্যবসা। যেখানে উদ্যোক্তা, কর্মী ও সেবা গ্রহীত প্রায় সকলেই নারী। এছাড়াও পিছিয়ে পড়া আদিবাসি নারীরাও এই ব্যবসার সরাসরি সম্পৃক্ত। এই খাতে সেবার মূল্য বৃদ্ধির ফলে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তা পূনরায় হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, বাজেটে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র শিল্পে তাদের চলমান অংশগ্রহণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আলাদাভাবে প্রকল্প গ্রহনের প্রস্তাব করছি। যার ফলে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষ্টি ও ঐহিত্য ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বিএনএনিউজ/মনির