20 C
আবহাওয়া
১:৫৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮৬

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮৬

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

৮৬ পর্ব
২২ আগস্ট, ১৯৭১
লণ্ডনের ‘ডেলী টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার পন্থা স্থির করার উদ্দেশ্যে ইসলামাবাদ ও তেহরানে গোপনে গোপনে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলেছে। এই তৎপরতার নায়ক ইরান। আর এর পিছনে নাকি সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার। খবরটিতে আরো বলা হয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি ইতিমধ্যেই তেহরান গিয়ে পৌছেছেন। সেখানে ইরানের উদ্দ্যোগে তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের গোপন সাক্ষাতকারের আয়োজন হবে।

পায়ের তলা থেকে দ্রুত মাটি সরে যাচ্ছে ইয়াহিয়ার

সুদূর ইরানে বাংলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে পর্দার অন্তরালে কি ঘটছে স্পষ্ট করে জানবার উপায় নেই। আর সে নেপথ্য নাটকে তেহরান-চীন-রাশিয়ার ভূমিকাটাও সহজবোধ্য নয়। ডেলী টেলিগ্রাফের এই খবরটি ছাড়া এ ব্যাপারে আর কোন সূত্র থেকে কোন তথ্যও আমাদের হাতে আসেনি। তাই এক কথায় খবরটি উড়িয়ে দেয়া বা একে সত্য বলে মেনে নেয়া কোনটাই সহজ নয়। তবু কথা আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে জল্লাদ ইয়াহিয়ার ভাড়াটিয়া বাহিনী আজ দিশেহারা। প্রতিদিন ওরা মরছে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। আর সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে মাত্র কয়দিন আগে নতুন করে এক ডিভিশন সৈন্য আমদানী করা হয়েছে বাংলাদেশে। আমেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র আসছে, চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম আসছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞ এসেছে। এমনকি জর্দান থেকেও লোক ভাড়া করে আনা হয়েছে বাংলাদেশের বীর যোদ্ধাদের মোকাবেলা করার জন্য। কিন্তু তবুও অবস্থার উন্নতি হয়নি। পায়ের তলা থেকে দ্রুত মাটি সরে যাচ্ছে ইয়াহিয়ার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ

প্রতিদিন নয়া নয়া এলাকা মু্ক্ত হচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইয়াহিয়া খান প্রাণপণ চেষ্টা করেছে পাক-ভারত যুদ্ধ বাধাতে। ভারত-সোভিয়েত শান্তি, মৈত্রি ও সহযোগিতার চুক্তি তার দুরভিসন্ধি সে বানচাল করে দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের খায়েশ মিটে গিয়েছে ইয়াহিয়ার। ক্ষমতার মদমত্ত সেই নরঘাতক চেষ্টা করেছে জাতিসংঘকে টেনে এনে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ডেকে বাংলাদেশ প্রশ্নকে পাক-ভারত বিরোধ বলে চিহ্নিত করতে। কিন্তু সে চেষ্টাও তার নিদারুণ ব্যর্থতা বরণ করেছে। আরেকটা চাল খেলেছে খুনী ইয়াহিয়া। সে ভেবেছিল বিচারের নামে প্রহসনের মঞ্চ সাজিয়ে ভাড়াটিয়া মিলিটারি জজ-ব্যারিস্টারের পুতুল নৃত্যের ব্যবসা করে শেখ মুজিবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যাবে। আর তার ফলে মনোবল ভেঙ্গে যাবে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের। তার ভাড়াটিয়া ডালকুত্তা বাহিনীর দুরু দুরু বক্ষে আসবে নতুন শক্তি – দাবিয়ে দেওয়া যাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। কিন্তু এখানেও হতাশ হয়েছে জেনারেল ইয়াহিয়া। এ খবরে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে মুক্তিবাহিনী। তীব্রতর হয়েছে তাদের আক্রমণধারা। তারই পাশাপাশি বিশ্বজনমতের প্রচণ্ড চাপে শাণিত ছুরিকা খসে পড়েছে জল্লাদের হাত থেকে। তার প্রমাণ বিচারের সঙ্গে সঙ্গেই শেখ মুজিবকে গুলি করা হবে না বলে জাতিসংঘে পশ্চিম পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আগা হিলালীর ঘোষণা।

তেহরানের গোপন কূটনৈতিক তৎপরতা

ইয়াহিয়ার সামনে এখন পাকিস্তান নামক মৃত ঘোড়াটিকে জীবিত করে তোলার আর কোন পথই খোলা নেই। তবু শেষ চেষ্টা করছে সে। শেখ মুজিবকে ফিরিয়ে দিয়ে হলেও যদি বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে রাখা যায়, সেটাই তার শেষ চেষ্টা। হতে পারে, এই উদ্দেশ্যেই চলেছে তেহরানের গোপন কূটনৈতিক তৎপরতা। আবার এমনও হতে পারে যে, এই তৎপরতা নতুন কোন জালিয়াতি, কোন দুরভিসন্ধি হাসিলের জঘন্য ষড়যন্ত্রেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।……

(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১১০) চলবে।

আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮০

সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা

Loading


শিরোনাম বিএনএ