32 C
আবহাওয়া
৯:৫৮ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাজাকার: ১৯৪৭ থেকে ২০২৪!

রাজাকার: ১৯৪৭ থেকে ২০২৪!


 

।।শামীমা চৌধুরী শাম্মী।।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগকালে তদানীন্তন হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম ভারতভুক্ত হতে অনিচ্ছুক থাকায় ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য রাজাকার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন।  যারা ছিল প্রো-পাকিস্তানী বাংগালী অথবা বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দু ভাষী মাইগ্রেন্ট। ইস্ট-পাকিস্তানী রাজাকার অরডিন্যান্স এবং মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স অরডিন্যান্স এর মাধ্যমে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকাররা পাকিস্তানী আর্মির অংশ বলেই ধরা হত। রাজাকাররা লাইট ইনফেন্ট্রি উইপন্স পেয়ে থাকত। “রাজাকার” ফার্সি শব্দ এর অর্থ “স্বেচ্ছাসেবী”।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা রাজাকার শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়। যুদ্ধরত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজাকার দল গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানকল্পে মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন কর্মী নিয়ে হায়দ্রাবাদের “রাজাকার” -এর অনুকরণে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। দেশের অন্যান্য অংশেও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে যা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তারা মূলত ছিল তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও সমর্থনকারী  একটি বেতনভূক্ত সিভিল যুদ্ধকালীন বাহিনী।

নাটক সিনেমায় দেখা যায়, রাজাকার মানে দাঁড়ি টুপি পাঞ্জাবি পড়া বয়স্ক মানুষ, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি মিলিটারির কাছে তুলে দেওয়া, ধন সম্পদ লুট ও নারী নির্যাতনকারি!

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে এপি’র ধারণ করা এক ফুটেজে দেখা যায়, বাংলাদেশের বিপক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি রাজাকাররা ছিল অল্প বয়সী তরুণ ও যুবক। বয়স্ক কাউকে রাজাকার বাহিনীতে রিক্রুট করা হয়নি। তাদেরও নির্ধারিত একটি পোষাক ছিল। রাজাকারদের কারো দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি ছিল না।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বদেশি বিশ্বাসঘাতক বোঝাতে শ্লেষাত্মক প্রতিক্রিয়া ও অভিব্যক্তি হিসেবে ‘রাজাকার’ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে। জনপ্রিয় লেখক  হুমায়ূন আহমেদ রাজাকার শব্দটি ঘৃণার্থে  ব্যবহার করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক বহুব্রীহিতে তুই রাজাকার শব্দটি  প্রথম প্রচার করা হয়, যা ছিল ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রথম বার রাজাকার শব্দের ব্যবহার।

এরপর রাজাকার শব্দটি নতুন প্রজন্মের কাছে দ্বিতীয় দফা পরিচিতি পায়। ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি ঘৃণিত অর্থে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো। ‌ওই সময় মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচার চলছিল। দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেখা যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই রাজাকার শব্দটিই যেন আন্দোলনের ‘ফুয়েল’ হয়ে ওঠে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী গর্বের সঙ্গে রাজাকার শ্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক, অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত ১৫ জুলাই ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেছেন, “তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার।” আমরা জানি রাজাকার শব্দটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত শব্দ। তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে রাজাকার বলছে কেন?

উত্তর : “কেউ একজন” আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সমাজকে রাজাকার বলেছেন, সেই প্রতিবাদে সীমাহীন দুঃখ কষ্ট বুকে নিয়ে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত, অধিকারবঞ্চিত শিক্ষার্থী সমাজ নিজেদেরকে এই “রাজাকার” বলাটা যে একটা শক্তিশালী আয়রনি, অনেক বড় একটা প্রতিবাদ এই সামান্য বিষয়টি আমাদের আশেপাশের অনেক বলদ বুঝবে না। এই সামান্য জিনিস বোঝার জন্য মাথায় কিছু জ্ঞানও তো থাকতে হয়!  ড. আসিফ নজরুল তার পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন। নিজেদের রাজাকার বলা এই ছাত্ররাই পরবর্তীতে ৫ই আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে চুড়ান্ত বিজয় পেয়েছে। যাকে তারা নাম দিয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। সেই সঙ্গে রাজাকার শব্দটি ঘৃণার পরিবর্তে এখন গর্ব ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে!

বিএনএ নিউজ২৪,ওজি/হাসনা


শিরোনাম বিএনএ